আপনার শিশুর জন্য খেলায় খেলায় সাতটি সহজ শিক্ষা
শিশু বড় হওয়ার সময় শারীরিক বৃদ্ধির পাশাপাশি তার বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশও ঘটতে শুরু করে। এছাড়া এ সময় থেকেই শিশু একটু একটু করে নিজের ব্যক্তিস্বত্তা বুঝতে শুরু করে এবং নিজের চারপাশের নতুন চোখে দেখতে শুরু করে। এই যাত্রায় শিশুর সঙ্গী হয়ে আপনাকেও বড় একটা ভূমিকা পালন করার আছে। আপনাকে এমন কিছু খেলার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে যেগুলো শুধু বিনোদনদায়ী নয়, শিক্ষামূলকও। এখানে এমন কিছু খেলায় খেলায় শিক্ষার কথাই বলা হচ্ছে যেগুলো আপনার শিশু উপভোগ করতে পারে।
১। ড্রেস-আপ প্লেয়িং:
একটা বয়স পর্যন্ত আপনার শিশুকে নিজ হাতেই পোশাক পরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সময়ের সাথে শিশু যখন বড় হচ্ছে, তখন তাকে স্বনির্ভর হিসেবে তৈরী করতে হলে একটু একটু করে তার নিজের কাজ নিজেকে করতে শেখাতে হবে। নিজের পোশাক নিজে পরতে শেখা এর মধ্যে অন্যতম কাজ।
শিশুকে অনেকগুলো পোশাক একবারে দিন। এবার যে কোনো একটি রঙ নির্বাচন করে তাকে বলুন সেই রঙের পোশাক খুঁজে একা একা পরতে। প্রথম প্রথম হয়তো সে উলটো করে পোশাক করবে। কিন্তু প্রতিদিন একবার করে খেলার ছলে তাকে পোশাক পরতে দিলে একসময় সে একা একাই নিজের পোশাক নিজে পরা শিখে যাবে।
২। লুকানো খেলনা খুঁজে বের করা:
আপনার সন্তানের জন্য একদম সহজ একটা খেলা হচ্ছে পছন্দের খেলনা খুঁজে বের করা। শিশুর পছন্দের খেলনাগুলো ঘরের কোনো এক জায়গায় লুকিয়ে রেখে তাকে বিভিন্ন ক্লু দিন খুঁজে বের করার জন্য। প্রয়োজনে শিশুর সাথে আপনিও খুঁজতে শুরু করুন। ক্লুগুলো তাকে বারবার মনে করিয়ে দিন। এভাবে শিশু নতুন কিছু আবিষ্কার করার মজাটা শিখে যাবে।
৩।গল্পের বই পড়ে শোনানো:
শিশুর কল্পনাশক্তি বৃদ্ধির জন্য তাকে ছোটো ছোটো স্টোরি বুক থেকে গল্প পড়ে শোনান এবং গল্প বলার সময় স্টোরিবুকের ছবি দেখিয়ে তাকে গল্পের প্রতিটি চরিত্রের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। এতে করে শিশু সৃজনশীলতার সঙ্গে ভাষাগত দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে।
৪। খেলনা পুতুল বা পশুপাখির সঙ্গে খেলাধূলা:
খেলনা পশুপাখি বা পুতুলের সাথে খেলা করা শিশুদের দায়িত্ববোধ শেখানোর আরেকটি কার্যকরী পদ্ধতি। আপনার শিশুকে এক সেট খেলনা পশুপাখি বা পুতুল কিনে নিন। ওকে শেখান কীভাবে এর যত্ন নিতে হয়। কীভাবে এগুলোর সঙ্গে কথা বলতে হয় সেটাও শেখাতে পারেন। সে যখন এই পশুপাখি বা পুতুলকে সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে ভাবা শুরু করব, ধীরে ধীরে অন্যের প্রতি ভালোবাসা, মমত্ববোধ, দায়িত্ববোধ ও সহমর্মিতার শিক্ষাও সে পাবে।
৫। ছবি আঁকা:
আপনার শিশুর সৃজনশীলতার বিকাশ সবচেয়ে বেশি ঘটবে ছবি আঁকার মাধ্যমে। ছবি মানেই যে সুন্দর ঘর-বাড়ি দৃশ্য তাকে আঁকতে হবে এমন নয়। প্রথম প্রথম সাদা কাগজে তাকে শুধু পেন্সিল বা কলম দিয়ে দাগাতে দিন। । সেই সাথে কিনে দিন কালার ও ক্রেয়ন তুলে দিন। শুরুতে সে জামা ও আশেপাশের সবকিছু নষ্ট করে ফেলতে পারে। কিন্তু ধীরে ধীরে সে রঙ নিয়ে খেলা শিখে যাবে।
৬। ক্রাফটিং:
ক্রাফটিং এই সময় শিশুদের অন্যতম জনপ্রিয় সৃজনশীল খেলা। রঙ বেরঙের ক্রাফটিং পেইজ, গ্লু, কাঁচি, গ্লিটার দিয়ে সুন্দর সুন্দর জিনিস বানাতে শিশুরা পছন্দ করে। তবে শিশুর হাতে এরকম কিছু দেওয়ার আগে খেয়াল রাখতে হবে আগে যেন নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। পণ্যগুলোর লেবেল ভালোভাবে খেয়াল করুন। দেখুন, সবকিছু যেন শিশুর হাতের কাছে থাকে এবং খেলার জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকে। ক্রাফটিংয়ের জন্য নন টক্সিক রঙ ব্যবহার করতে হবে, একই সঙ্গে কাঁচি আর গ্লিটারের জন্যও ‘বেবি-সেইফটি’ খেয়াল রাখা উচিত। আর ক্রাফটিংয়ের সময় শিশুসন্তানকে একা ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। আপনার শিশুসন্তান প্রথম প্রথম এই কাজগুলোর উদ্দেশ্যটা ধরতে পারবে না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে এখান থেকে আনন্দের সাথে শিক্ষাও পেতে শিখবে ।
৮। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চেনা:
শিশুর সাথে মজার খেলার ছলে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চিনিয়ে দেয়ার কাজ খুব সহজে করে ফেলা যায়। যেমন আপনি তাকে বলতে পারে, “বাবু, তোমার হাত কই, হাত কই?” এভাবে বারবার জিজ্ঞাসা করে আপনি নিজেই তার হাত দেখিয়ে দিয়ে বলবেন, “এই যে হাত, এই যে তোমার হাত”। এভাবে শরীরের বাকি অংশের নামও তার সামনে বারবার বলে দেখিয়ে দিলে, এক সময় সে নিজেই বলতে পারবে কোনটা তার হাত, পা, কপাল, মুখ বা মাথা।
শিশুর বুদ্ধিমত্তার বিকাশ অনেকটুকু নির্ভর করে তার প্রতিদিনকার কাজের ওপর। তাই এমন কিছুতে শিশুতে মগ্ন রাখার চেষ্টা করুন যেগুলো খেলতে সে মজা পাবে একই সঙ্গে তার ওপর দীর্ঘমেয়াদে ভালো প্রভাব ফেলবে।