এই গরমে গর্ভবতী মায়েদের জন্য যে ৫টি স্বাস্থ্যকর খাবার প্রতিদিন প্রয়োজন
গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীরে অতিরিক্ত পুষ্টি এবং যত্নের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে একজন মায়ের শরীরে অন্য সময়ের তুলনায় প্রতিদিন প্রায় ৩৫০-৫০০ ক্যালোরি পুষ্টি বেশি প্রয়োজন হয়। গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই যদি ঠিকমতো পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া হয় তাহলে সেটা বাচ্চার স্বাস্থ্য এবং সুস্থতাকেও প্রভাবিত করে।
তাই গর্ভবতী মাকে তার অনাগত সন্তান ও নিজের সুস্থতার জন্য গর্ভাবস্থায় একটি আদর্শ খাদ্য রুটিন মেনে চলতে হবে। শুধু মাত্র যেকোনো খাবার খেয়ে ওজন বাড়ালেই পুষ্টি বৃদ্ধি পায় না। পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক, ফলিক এসিড, ভিটামিন এ, সি, ডি এবং আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি খেতে হবে।
গর্ভাবস্থায় যে খাবারগুলি আপনার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত সেরকম ৫টি স্বাস্থ্যকর খাবার উল্লেখ করা হলো:
দই এবং দুধজাতীয় খাবার:
গর্ভাবস্থায় প্রথম যে খাবারটির নাম সবার মনে আসে তা হলো দুধ এবং দুধজাতীয় অন্যান্য খাবার। আপনি গর্ভবতী এটা জানার পর থেকে নিয়মিত দুধ এবং দুধজাতীয় খাবার বেশি করে খান। দুধে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও খনিজ, সব ধরনের খাদ্য উপাদান থাকার জন্য এটাকে কমপ্লিট ফুড বলা হয়।
গর্ভবতী নারীদের জন্য এসময় শরীরে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন বি, জিংক ও ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন হয় শিশুর শারিরীক গঠনের জন্য। দুধ থেকে তৈরী দই এ সময় হতে পারে একটি উপযোগী খাবার। কারণ দুধের তৈরী অন্যান্য খাবারের তুলনায় দইয়ে ক্যালসিয়াম বেশি থাকে। এছাড়া দইয়ে প্রোবায়োটিক থাকায় এটি অন্যান্য খাবার হজমেও সাহায্য করে। ল্যাকটোজ এলার্জি থাকলেও অনেক সময় অনেক গর্ভবতী নারী সরাসরি দুধ খেতে পারেন না, সেক্ষেত্রেও প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দই একটি উপযোগী খাবার।
ডাল, শিম, বীজ জাতীয় খাবার:
গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ডাল, শিম ও বীজ জাতীয় খাবার রাখা উচিত। এছাড়া মটরশুঁটি, ছোলা, বাদাম প্রতিদিন কিছু পরিমাণ খেতে হবে। ডাল এবং বীজ জাতীয় খাবারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি৯ (ফলেট)। ভিটামিন বি ৯ বা ফলেটের অভাবে গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতা যেমন অপ্রতুল ওজন, বাচ্চা জন্মের সময় জীবননাশের ঝুঁকি, বাচ্চার ওজন কম এ ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। ফলেট বা ভিটামিন বি নবজাতকের লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্ক -শিরদাঁড়ায় নিউরাল টিউব বিকাশে অবদান রাখে। এক কাপে ডালে প্রায় ৬৫-৯০% ফলেট থাকে। তাছাড়া ডালে প্রোটিন ও লৌহ থাকে, ডাল হজম করাও সহজ। তাই ডাল হতে পারে গর্ভবতী মায়েদের জন্য আদর্শ খাবার।
মিষ্টি আলু:
মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে বেটা ক্যারোটিন নামের জৈব যৌগ রয়েছে যা আমাদের শরীরে ভিটামিন এ তৈরীতে সহায়তা করে। গর্ভে থাকা বাচ্চার শরীরে কোষ এবং টিস্যু গঠনে ভিটামিন এ এর কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। একজন গর্ভবতী নারীকে প্রাত্যহিক খাবারের রুটিনে সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণ ভিটামিন এ রাখা উচিত। । প্রাণীজ ভিটামিন এ যতোটা সম্ভব পরিহার করা ভালো। তাই গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম সিদ্ধ মিষ্টি আলু খেতে হবে। এই প্রমাণ মিষ্টি আলু প্রতিদিন গ্রহণ করলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ শরীরে পৌঁছাবে।
সামুদ্রিক মাছ:
সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ও ভিটামিন ডি রয়েছে। সাধারণত গর্ভবতী নারীদের পুষ্টি তালিকায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার খুব একটা থাকে না। কিন্তু ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড আপনার অনাগত সন্তানের ব্রেইন গঠন ও চোখের দৃষ্টির জন্য খুব কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
গর্ভবতী মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিনের লেভেল বাড়াতে সামুদ্রিক মাছ খুব উপকারী। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন যে কোনো সামুদ্রিক মাছের টুকরো। স্যালমন, টুনা, লইট্টা, সুরমা এসব মাছে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ও ভিটামিন ডি রয়েছে যা গর্ভবতী নারীর ইমিউন ফাংশনকে সচল রাখতে সাহায্য করবে।
ডিম:
ডিম এমন একটি খাবার যার ভিতর সবধরনের পুষ্টিই বিদ্যমান। ডিমে ক্যালোরির পাশাপাশি রয়েছে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। ডিমে কোলিন নামের একটি উপাদান রয়েছে যা গর্ভবতী মা এবং শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়। কোলিন মস্তিষ্ক গঠনেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কোলিনের পরিমাণ গর্ভবতীর শরীরে কম থাকলে সেটা গর্ভবতী মায়ের ফেলোপাইন টিউবে ক্ষতি করে। ফলে শিশুর শারিরীক গঠন ঠিক মতো না হওয়া, শিশুর ব্রেইনের গঠনে সমস্যা সহ বিভিন্ন রকম জটিলতা দেখা দেয়। তাই গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের খাদ্য তালিকায় ডিম একটি অপরিহার্য খাবার।
গর্ভাবস্থায় আপনার জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো নিজের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা ও সুস্থ থাকা। আপনার স্বাস্থ্যের অবনতি আপনার শিশুর স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করে। তাই শরীরে পুষ্টি এবং ক্যালোরির পরিমাণ ঠিক রাখতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখুন। । গর্ভাবস্থায় যতো পুষ্টিকর খাবার খাবেন, সেটি আপনার গর্ভকালীন জটিলতা দূর করতে সাহায্য করবে এবং একটি সুস্থ, সুন্দর শিশুর জন্মদানের পথ সুগম করবে।