এই গরমে আপনার শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা দূর করতে কী কী করবেন?
অন্য সময়ের তুলনায় গরমের দিনে আপনার শিশুর খাওয়া-দাওয়ার প্রতি একটু বেশি যত্নশীল হতে হয়। এক এক বয়সী শিশুর খাদ্যে এক এক রকম পরিবর্তন আনতে হয়। অন্যান্য ঋতুর তুলনায় সাধারণত গরমে সবার শরীরেই পানির ঘাটতি দেখা দেয়। বড় মানুষরা নিজেরাই নিজেদের যত্ন নিতে পারলেও আপনার ছোট্ট সোনামণি মুখ ফুটে বলতে পারে না যে তার শরীরে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না। তাই শিশুর জন্মের পর বেড়ে ওঠার সাথে সাথে নিয়মিত তার খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন যাতে পুষ্টির সাথে শরীরে পানির পরিমাণ ঠিক থাকে। খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি আরো কিছু নিয়ম মেনে চললে আপনার শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে এই গরমে আপনার একদম চিন্তা করতে হবে না।
বিভিন্ন বয়সী শিশুর খাদ্যাভ্যাস:
০-৬ মাস বয়সী শিশুর খাবার:
নবজাতক শিশু যেহেতু বুকের দুধ খায়, এ সময় তাকে আলাদাভাবে পানি খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। বাচ্চা শক্ত খাবার শুরু করার পর পানি খেতে পারবে। তবে যদি শিশুকে কৌটার দুধ খাওয়ান তবে কুসুম গরম পানি পান করাতে পারেন। বিশেষ করে গরমকালে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে শিশুকে যদি দুধ খাওয়ানো হয়, তাহলে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে দুধের বদলে সামান্য পানি পান করাতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে আপনার শিশু বিশেষজ্ঞের মতামত জরুরি।
৬-১২ মাস বয়সী শিশু:
এ সময় শিশুকে শক্ত খাবার দেওয়া হয়, তাই পাশাপাশি কিছুক্ষণ পর পর এক চামচ দুই চামচ করে পানি দিতে পারেন। ১বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে বুকের দুধ বা কৌটার দুধ নিয়মিত খাওয়াতে হবে, সেই সাথে প্রতিদিন অল্প পরিমাণ পানিও দিতে হবে যাতে শরীরে পানির পরিমাণ ঠিক থাকে। বিশেষ করে শক্ত খাবার খাওয়ার পর অল্প অল্প পানি পান করান।
১-২ বছর বয়সী শিশু:
বুকের দুধের পাশাপাশি গরুর পাস্তুরিত দুধ দিতে পারেন এ সময়। তবে পানি বেশি করে খাওয়াতে হবে। খুব বেশি গরমে মাঝে মাঝে শিশুকে ঠান্ডা ফলের রস দিতে পারেন। তবে দাঁতের সমস্যা থাকলে বা ঠান্ডার সমস্যা থাকলে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় যে কোনো ফলের রস যেমন কমলা, বেদানা, আঙুর, তরমুজ ইত্যাদি দিতে পারেন। তবে বাইরেরনয়, ঘরের তৈরি ফলের রস খেতে দিন শিশুকে। এ ছাড়া বাচ্চা মুরগির স্যুপ, নরম খিচুড়ি বা সবজি স্যুপ ও খাওয়াতে পারেন। এতে করে শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা তৈরী হবে না।
শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা দূর করতে আরো যা যা করতে পারেন আপনি:
১। শিশুকে রোদ থেকে দূরে রাখুন। বিশেষ করে সকাল ও দুপুরের কড়া রোদে শিশুকে বের করবেন না। খুব প্রয়োজনে শিশুকে বিকালের পর বা সকালের কড়া রোদের আগে বাইরে নিয়ে যেতে পারেন। বাইরে বের হলে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করুন। শিশুকে আরামদায়ক সুতির নরম পোশাক পরান যাতে সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারে। এ ছাড়া ঘেমে গেলে নিয়মিত বেবি পাউডার ব্যবহার করুন।
২। শিশুর শোবার ঘর সবসময় ঠান্ডা রাখুন। অতিরিক্ত গরমে শিশু ঘেমে যায় ফলে শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়। পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করছে কি না দেখে নিন।
৩। শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে তার চামড়া খসখসে হয়ে যায়। তাই এরকম অবস্থায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৪। অনেক সময় শিশু পানি পান করতে চায় না। তাই তাকে সুন্দর ওয়াটার পট কিনে দিন যাতে সে বিশেষ অনুভুতি পায়। এছাড়া খাবার সময় তাকে নিজে হাতে গ্লাস ধরে পানি পান করতে শেখান।
৫। বিভিন্ন ফলের রস দিয়ে তাকে মজাদার জুস বানিয়ে দিন। এটা সব শিশুই খুব আগ্রহ নিয়ে খায়। বিশেষ করে রঙ বেরঙের জুস দেখলে শিশুর খাবার আগ্রহ বাড়ে।
৬। প্রতিদিন গোসল করালে অনেক সময় ঠান্ডা লেগে যায়। এদিকে প্রচন্ড গরমে শিশু বারবার ঘামে। তাই যে দিন গোসল করাবেন না সেদিন শিশুর শরীর স্পঞ্জ দিয়ে মুছে দিতে পারেন।
শিশুর খাবার এবং অন্যান্য কিছু বিষয় মেনে চললে এই গরমে আপনার ছোট্ট সোনামণি থাকবে একদম সুস্থ।