গরমে শিশুর ত্বক ময়েশ্চারাইজ করার প্রয়োজনীয়তা
নবজাতকের ত্বক বড়দের তুলনায় অনেক বেশি কোমল ও সংবেদনশীল হয়। তাই সহজেই রোদের সংস্পর্শে আসলে ত্বকে র্যাশ, ঘামাচি, লাল লাল দাগ দেখা দেয়। এছাড়া শিশুর ত্বক ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে ততোটা সক্ষম নয়, তাই শিশুর ত্বকের যত্নে একটু বেশিই সচেতন থাকতে হয় আমাদের।
তবে শিশুর ত্বককে বড়দের তুলনায় স্বাভাবিক আর্দ্রতা বেশি। তাই ক্ষতিকারক জীবাণু থেকে শিশুকে মুক্ত রাখতে শিশুর ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে। সময় মতো পরিষ্কার করা, গোসল করা, লোশন ও পাউডার মাখানো এবং রোদ থেকে সুরক্ষিত রাখলে শিশুর ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে।
মেলবোর্নে রয়্যাল চিলড্রেন হসপিটালের রিসার্চ অনুযায়ী, ৩৭ সপ্তাহের কমবয়সী শিশুর ত্বক অনেক বেশি স্পর্শকাতর থাকে তাই এ সময় শিশুর ত্বকে বিশেষভাবে ময়েশ্চারাইজিং এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এই গরমে কী কী কারণে শিশুর ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজিং করবেন?
১। গোসলের পর শিশুর ত্বক স্বাভাবিকের চেয়ে শুষ্ক হয়ে যায়। তাই এ সময় শিশুর ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং-এর প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে বেবি ওয়াশ দিয়ে গোসল করানোর পর শিশুর ত্বক ময়েশ্চারাইজ না করলে শুষ্ক হয়ে ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই অবশ্যই আপনার শিশুর ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে গোসলের সময় ভালো একটি বেবি ওয়াশ ও পরে ভালো একটি বেবি লোশন ব্যবহার করুন।
২। গরমে ডায়পার পরানোর কারণে শিশুর ন্যাপি এরিয়াতে প্রচুর র্যাশ দেখা দেয়। তাই ডায়পার পরিবর্তন করার পর অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত ন্যাপি এরিয়াতে বেবি র্যাশ ক্রিম ব্যবহার করলে ন্যাপি এরিয়াতে র্যাশ বা চুলকানির পরিমাণ কমে যায়। ত্বকের সংবেদনশীলতা বজায় থাকে। ফাঙ্গাস বা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকেও ত্বক সুরক্ষিত থাকে। তবে আপনি যদি র্যাশ ক্রিম না পান তাহলে বেবি পাউডার ব্যবহার করতে পারেন।
৩। শিশুকে বারবার পরিষ্কার করতে হয় বলে বারবার তার ত্বক ভিজে যায় আবার আমরা মুছে দেই। বিশেষ করে খাওয়ার সময় মুখ পানি দিয়ে মুছে দেওয়া হয় বলে একবার ভেজা একবার শুকনো থাকে। এতে করে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়, ত্বক শুকনো হয়ে যায়। তাই খাওয়ার আগে শিশুর মুখে ভালো করে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, খাওয়ার পর মুখ মুছে দিন এবং আবারো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এতে শিশু ত্বকের কোমলতা বজায় থাকবে।
৪। জন্মের পর এক বা দুই সপ্তাহ পর থেকে নবজাতকের শরীরের চামড়া উঠতে থাকে। এ সময় শিশুর ত্বক সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল থাকে। জন্মের পর শিশুর ত্বকে এমনিওটিক ফ্লুইড ও ভার্নিক্স নামের দুটি পদার্থ থাকে। জন্মের পর শিশুকে মুছে দেয়া হয় ফলে ভার্নিক্সের আবরণ চলে যায়। তাই শিশুর চামড়া উঠে ত্বকের ভিতরের চামড়া বের হয়ে আসে। অনেক সময় বাবা-মা নারিকেল বা সরিষার তেল ব্যবহার করে থাকেন। শিশুর যদি এলার্জির সমস্যা থাকে তখন এসব তেল ব্যবহারে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তবে আপনি নিশ্চিন্তে বেবি অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
৫। শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে অনেক সময় চামড়া খসখসে হয়ে যায়। তখন নিয়মিত পানি এবং ফলের রস খাওয়ানোর সাথে সাথে শিশুর শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে ও ত্বকের কোমলতা বজায় রাখতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
শিশুর ত্বক নানা কারণেই আর্দ্রতা হারায়- বারবার পানি বা রোদের সংস্পর্শে এসে, এলার্জির কারনে, ঘামাচির কারণে অথবা অন্য কোনো পরিবেশগত কারণে। এছাড়া অনেক সময় নতুন জামা পরানোর ফলে শরীরে চুলকানি দেখা দেয়।
শিশুর জন্মের পর থেকে তার ত্বকের জন্য চাই আলাদা পরিচর্যা। বেবি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার তাই বিকল্প নেই। নিয়ম মতো শিশুর ত্বক ময়েশ্চারাইজিং করলে স্বাভাবিক কোমলতা বজায় থাকে। সহজে ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস আক্রমণ থেকেও ত্বক সুরক্ষিত থাকে।