মায়েদের ফিটনেস
জীবনে একটা বাচ্চা চলে আসার অর্থ নিজের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তনের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়া। একজন নারীর জীবনে মা হওয়া সবচেয়ে সুখকর অনুভুতি, তবে এসময় সব মাকেই কিছু প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। এর একটি হলো ফিটনেস বজায় রাখা। এসময় শিশুকে যেহেতু বুকের দুধ খাওয়ানো হয়, তাই শারীরিক শক্তি ধরে রাখতে ফিটনেস দরকার হয়। সাথে গর্ভাবস্থার ওজন হ্রাস করতে এবং মানসিক সুস্থতার উন্নতি করতে কিছু অনুশীলন বেছে নিতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত অনুশীলন মানসিক চাপ এবং হতাশা কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এসময় আপনি যদি একটি স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্যাভ্যাসের সাথে থাকেন, তাহলে শরীরের বাড়তি মেদ ঝরতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি বাচ্চাকে স্তন্যপান করাতেও কোনো সমস্যা হবে না।
গর্ভাবস্থার পরে আপনার সাথে সাথেই অনুশীলন শুরু করা উচিত নয়। যথাযথ বিশ্রাম নিয়ে শারীরিক শক্তি পুনরুদ্ধার করার পর শুরু করা উচিত। শরীরে অপেক্ষাকৃত কম প্রভাব পড়ে এমন মাঝারি অনুশীলন দিয়ে শুরু করুন। আপনার শিশুর জন্মের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ আপনার সমস্ত শারীরিক শক্তি নিজের এবং আপনার সন্তানের যত্নে ব্যয় করুন। যখনই সম্ভব ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং শরীরে পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করার জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। কিছুদিন পর আপনি প্রস্তুত বোধ করলে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে দেখুন যে আপনি মাঝারি ধরনের অনুশীলন শুরু করার জন্য প্রস্তুত কি না।
ভালো আবহাওয়ায় শিশুর সাথে বাইরে হাঁটলে আপনারা দু’জনেই যেমন বিশুদ্ধ বাতাসের সাহচর্যে আসবেন, তেমনি আপনার জন্য এটি হালকা অনুশীলন করারও দারুণ একটি উপায়। নিয়মিত হাঁটা সেরোটোনিনের স্তর বাড়িয়ে তোলে, সাথে মনে ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে সহায়তা করে। দু-আড়াই মাস অতিবাহিত হবার পরে আপনি ধীরে ধীরে আপনার প্রতিদিনের রুটিনে কিছুটা শ্বাস প্রশ্বাসের এবং শক্তিবর্ধক অনুশীলন শুরু করতে পারেন।
সন্তান জন্মের ঠিক পরপরই ওজন দ্রুত কমানো সঠিক উপায় নয়। বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় এক সপ্তাহে ১ পাউন্ডের বেশি ওজন হারালে আপনার বুকের দুধে পরিবেশগত যে বিষক্রিয়া হয় তা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এটি খুব দ্রুত মেদ ঝরানোর কারণে ঘটে। পুষ্টি এবং ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাদ্য দ্রুত ওজন হ্রাস এড়াতে সহায়তা করে।
নতুন মায়েদের প্রতিদিন কমপক্ষে ১৮০০ ক্যালরি গ্রহণ করা উচিত। যে মায়েরা কমপক্ষে ৩-৬ মাস বুকের দুধ পান করান তাদের গর্ভাবস্থাকালীন ওজন কমানোর চেষ্টার জন্য যথেষ্ট সময় হাতে থাকে। স্তন্যপান করানোর সময় পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখলে ওজন কমানো নিরাপদ হতে পারে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ক্যালরি গ্রহণ না করলে বা শিশুকে না খাওয়ানোর ফলে দুধের সরবরাহ কম হলে শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব, অপুষ্টি এবং দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
যেহেতু আপনি বুকের দুধ খাওয়ানো মা হিসাবে অনুশীলন করছেন, কাজেই শরীরে পানির পরিমাণ ঠিক রাখতে পারাটাই অনুশীলনের মূলমন্ত্র। সুতরাং প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে ভুলবেন না। সাথে আর একটি বিষয় যা সাধারণত বিবেচনায় আনা হয় না, তা হল সহায়ক অন্তর্বাসের গুরুত্ব। আপনার স্তনটি এই পুরো সময় জুড়ে বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। কাজেই এই সময়ে অনুশীলনের জন্য একই সাথে আরামদায়ক অন্তর্বাসের প্রয়োজন।
নিয়মিত অনুশীলনের ফলে নতুন মায়েদের দ্রুত স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার হয় এবং পেশীশক্তি পুনর্নির্মাণ হয়। এছাড়াও দেহের দৃঢ়তা বাড়ায়, ওজন কমাতে সাহায্য করে, ক্লান্তি দূর করে, মানসিক চাপ কমায়, হতাশা দূর করে। তবে প্রসবোত্তর অনুশীলন শুরু করার আগে সব সময় আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।