শিশুর কোমল ত্বক ও চুলের জন্য চাই সেরা যত্ন
নবজাতক শিশুকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর যে জিনিসগুলোর প্রতি রুটিন মাফিক লক্ষ্য রাখতে হবে তার মধ্যে অন্যতম হলো ত্বকের যত্ন। শিশুকে উষ্ণ এবং পরিপুষ্ট রাখাটাই তখন মা-বাবার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। নবজাতক শিশুর ত্বকের কমনীয়তা রক্ষার জন্য সবসময় নজর দেওয়াটা জরুরি।
জন্মের প্রথম কয়েক মাসে শিশুকে ঘনঘন গোসল করানোর কোনো প্রয়োজনই নেই। শিশুর ত্বকের সুরক্ষার জন্য প্রকৃতি প্রদত্ত তেলজাতীয় উপাদান ঘনঘন গোসলের কারণে ধুয়ে যেতে পারে। সপ্তাহে ২-৩ বারের মত শিশুকে গোসল করালেই চলে তখন। বরং অতিরিক্ত গোসলের কারণে শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং একজিমা দেখা দিতে পারে। (ত্বকে গোল গোল রুক্ষ ও লাল ঘা দেখা দিলে সেটাকে একজিমা বলা হয়।)
ডায়পার পরিবর্তন করাঃ
ডায়পার পরিবর্তন ছাড়া শিশুরা সাধারণত নোংরা হওয়ার সুযোগ পায় না। জন্মের পর প্রথম মাসে শিশুকে পরিষ্কার রাখবার জন্য সপ্তাহে দুই বা তিনবার স্পঞ্জ দিয়ে গা মুছে দেওয়াই যথেষ্ট।
শিশুকে লম্বা সময় ধরে নোংরা ডায়পারে রাখা যাবে না, এজন্য নিয়মিত এবং ঘনঘন ডায়পার পরিবর্তন করতে হবে। শিশুর ত্বক শুকনো এবং পরিষ্কার রাখলে ডায়পার অঞ্চলে ঘা হওয়ার সম্ভাবনাও কমে আসবে।
নবজাতক শিশুদের দিনে ১০ বা তারও বেশিবার ডায়পার পরিবর্তন করা লাগতে পারে। বয়স বাড়লে এই পরিবর্তনের মাত্রাও ধীরে ধীরে কমে আসবে। প্রথম কয়েক মাসে প্রতিবার ডায়পার পরিবর্তনের সময় বেবি ওয়াইপের মাধ্যমে আলতো করে শিশুর শরীর মুছে দিতে হবে, বা এ সময় ডায়পার ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। নতুন ডায়পার পরানোর আগে শরীর বাতাসে শুকিয়ে নেওয়ার জন্য সময় দিতে হবে, এতে ঘা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
শিশুর কমনীয় ত্বকে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এমন সুগন্ধী কোনো উপকরণ প্রথম কয়েক মাসে ব্যবহার না করাই ভালো। ত্বকের যত্নের জন্য শিশুদের জন্য তৈরি উপকরণ, যেমন – টিয়ার ফ্রি শ্যাম্পু, বাথ জেল, লোশন ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত। তবে এসবের কারণে এলার্জিজনিত সমস্যা হচ্ছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। শিশুর ত্বক শুষ্ক হতে দেওয়া যাবে না, এজন্য সবসময় হাতের কাছে বেবি লোশন রাখতে হবে।
শিশুকে কাপড় পরানোর আগে ভাল করে ডাই-ফ্রি এবং ফ্রেগ্রান্স-ফ্রি বেবি ডিটারজেন্ট দিয়ে কাপড় ধুয়ে দিতে হবে। শিশুর কাপড়, বিছানার চাদর, কম্বল আলাদা করে ধুয়ে নিতে হবে।
সদ্যোজাত শিশুর শরীর আলতো করে নিয়মিত মালিশ করে দেওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। আপনার মালিশের কারণে শিশুর সাথে আপনার স্নেহের বন্ধন সুদৃঢ় হবে। নিয়মিত মালিশের কারণে শিশুর অস্থি মজবুত হবে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে।
আর শিশুর ঘুমেরও এতে উপকার হবে এবং সে কান্নাও কম করবে। মালিশ করবার সময় শিশু যদি বিরক্তভাব দেখায় তবে জোর করবেন না, এর মানে আপনার শিশু এখনো প্রস্তুত নয়। আলতো স্পর্শে মালিশ করা উচিত যাতে শিশু আরাম পায়।
চুলের যত্নঃ
প্রতিদিন শিশুর চুল পরিষ্কার করাটা জরুরি নয়। তবে শিশু যদি অতিরিক্ত ঘামতে থাকে বা ক্রেডল ক্যাপ হয় তবে শিশুর চুল নিয়মিত ধুয়ে দেওয়া উচিত। তবে শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন নাকি ভেজা কাপড় দিয়ে মাথা মুছিয়ে দেবেন এটা পুরোপুরি আপনার সিদ্ধান্ত। শ্যাম্পু ব্যবহার করলে খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন বেবি শ্যাম্পু হয় এবং তার পিএইচ লেভেল যেন শিশুদের সহনীয় মাত্রায় (৫.৫) থাকে।
শিশুর চুলের গোড়া থেকে যে হলুদ তরল নিঃসরণ হয় তাকে ক্রেডল ক্যাপ বলে। দেখতে বাজে দেখালেও এতে শিশুদের খুব একটা সমস্যা হয় না। সময়ের সাথে সাথে এ সমস্যা দূর হয়ে যায়। ক্রেডল ক্যাপের জন্য বেবি অয়েল, আলমন্ড অয়েল বা মিনারেল অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।
তথ্যসূত্রঃ
1. https://www.workingmother.com/momlife/13707685/how-long-do-babies-wear-diapers/
2. https://www.medicalnewstoday.com/articles/14417.php
3. https://www.webmd.com/parenting/baby/what-baby-skin-care-products-do-you-need-your-newborn
4. https://www.thedailystar.net/lifestyle/tips/winter-skin-care-your-infant-child-1497232
5. https://www.rch.org.au/kidsinfo/fact_sheets/Skincare_for_babies/
6. https://www.mother.ly/lifestyle/11-natural-baby-skincare-products
7. https://www.johnsonsbaby.com/safety-standards/natural
8. https://www.kidshealth.org.nz/ear-infections-detail