শিশুর ঘুমের চাহিদা
জন্মের পরের প্রথম বছরটা শিশুর পরবর্তী সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়টাতেই শিশুর মস্তিষ্কের গঠন হতে থাকে। এজন্য একটি নবজাতক শিশুর প্রথম বছরে পর্যাপ্ত ঘুম আর খাবার দরকার। যেহেতু ঘুমের মাঝেই শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশের মূল কাজগুলো হয়, কাজেই এটা নিশ্চিত করা উচিত যেন শিশুর ঘুমে কোনো সমস্যা না হয় এবং টানা লম্বা সময় ধরে সে ঘুমাতে পারে। ০-৬ মাস বয়সের শিশুর ঘুমের রুটিনে সময়ে সময়ে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।
নবজাতক শিশুদের সাধারণত টানা ঘুম হয় না। ০-৩ মাস বয়সের শিশুরা ঘনঘন ঘুম থেকে জেগে ওঠে। এর কারণ এই বয়সে শিশুদের ঘুমের অর্ধেকটাই হয় আরইএম (র্যাপিড আই মুভমেন্ট) ঘুম। শিশুরা এ বয়সে দিন আর রাতের পার্থক্য বুঝে না, কাজেই তাদের দিন আর রাতের ঘুম বলে আলাদা কিছু নেই। এ বয়সে শিশুরা ১৬-২০ ঘন্টার মত ঘুমিয়ে থাকে। তবে প্রতি ২-৪ ঘন্টা পরপর তারা খাওয়ার জন্য জেগে ওঠে।
প্রথম ১২ সপ্তাহ পর শিশুদের ধীরে ধীরে দিন-রাতের আলাদা ঘুমের চক্র তৈরি হতে থাকে। ৩ মাসের বেশি বয়সী শিশুরা গড়ে ১৪-১৬ ঘন্টা ঘুমিয়ে থাকে। এ সময়েও তারা কিছুক্ষণ পরপর খাওয়ার জন্য জেগে ওঠে।
৩-৬ মাস বয়সের সময়ে শিশুদের ঘুমের নিয়ম একেকজনের একেক রকমের হয়। তবে সাধারণত সব শিশুই দিনে ৩ বারের মতো ঘুমিয়ে থাকে। এ সময় ঘুম পাড়ানোর জন্য তাদের বড়দের সাহচর্যের প্রয়োজন হয়।
নবজাতক শিশুদের ঢাকা শহরের কোলাহলের মাঝে ঘুমাতে সাধারণত সমস্যা হয় না। তবে ৫-৬ মাস বয়সের শিশুদের চারপাশের পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। কাজেই এই বয়সে শিশুদের ঘুম পাড়ানোর সময়ে চারপাশ পুরোপুরি নীরব না রাখাটাই ভাল, অন্যথায় নীরব পরিবেশে ঘুমানোর একটা অভ্যাস তৈরী হয়ে যাবে শিশুর।
৪-৬ মাস বয়সে শিশু তার মা-বাবার সাথে বিছানায় বা একা দোলনায় ঘুমাতে পারবে। এ বয়সের শিশুদের একা ঘুমাতে দেওয়া উচিত না।
শিশুকে সারা রাত ধরে টানা ঘুম পাড়িয়ে রাখতে চাইলে তাকে একাকী ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস করাতে হবে। এজন্য শিশুকে রাতের খাবার খাওয়ানোর পর কোলে নিয়ে দোল দিয়ে বা ঘুম পাড়ানি গান শুনিয়ে সে যখন আধো ঘুম অবস্থায় পৌঁছাবে তখনই তাকে বিছানায় বা দোলনায় শুইয়ে দিতে হবে। এতে করে রাতের মাঝখানে যদিও তার ঘুম ভেঙ্গে যায়, সে তার অভ্যাস অনুযায়ী নিজে নিজে আবার ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করবে।
জন্মের পরের কিছু সপ্তাহে শিশু কখন ঘুমাবে কখন জেগে উঠবে সেটা বলাটা মুশকিল। বয়স কিছুটা বাড়লে শিশুর রাতের ঘুমের সময় সন্ধ্যা ৭.৩০-৮ টার মাঝে ঠিক করে ফেলা উচিত। শিশুরা এ সময়ে দিনে ২-৩ বার ঘুমাবে। এজন্য নিয়ম করে খাওয়ানোর দুই ঘন্টা পর শিশুকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া উচিত।
শিশু কিভাবে শুয়ে ঘুমাচ্ছে এ ব্যাপারটাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর সাথে শিশুর আরাম এবং নিরাপত্তা দুটোই সম্পর্কিত। বিশেষজ্ঞরা বলেন শিশুকে সবসময় চিৎ করেই ঘুম পাড়ানো উচিত। শিশু যদি উপুড় হয়ে ঘুমিয়েও পড়ে তবে তাকে চিৎ করে দেওয়া উচিত। পেটের ওপর ভর দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে শিশুর শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা সহ অতিরিক্ত গরমের সমস্যাও হতে পারে।
শিশুর ঘুমের চক্র যদি ঠিকঠাক ভাবে তৈরি করে দেওয়া যায় তবে শিশুর সুস্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করা সম্ভব। যেমন, শিশুকে ঘনঘন ঘুমানোর সুযোগ দেওয়া উচিত। শিশুকে দেখে ক্লান্ত মনে হলেই তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া উচিত। এতে করে দিন ও রাতের পার্থক্য বুঝতেও শিশুর সুবিধা হবে। ৬-৮ সপ্তাহের শিশুর ঘুমের সাথে খাওয়ার সময়ের একটা সমন্বয় করা প্রয়োজন। যদিও এই বয়সে রাতে শিশুরা টানা ঘুমাবে না, তবুও রাতের ঘুমের সময় ঠিক করে ফেলা উচিত। ঘুমের সময় হলে শিশুর খাওয়া, ধোয়া- মোছা, কাপড় পরিবর্তন শেষ করে তাকে দোল দিয়ে, গান শুনিয়ে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করা উচিত।
তথ্যসূত্রঃ
1. https://babysleeplove.com/baby-sleep-basics/
2. https://www.lifehack.org/335554/sleep-basics-how-put-baby-sleep
3. https://www2.hse.ie/wellbeing/child-health/cot-death/your-babys-sleep-temperature.html
4. https://www.romper.com/p/7-signs-your-baby-is-overheated-which-can-happen-any-time-of-the-year-19433