শিশু কেন কাঁদে
শিশুর কান্না যে কোনো বাবা-মায়ের জন্য বেদনাদায়ক। শিশু যখন অঝোরে কেঁদে চলে তখন প্রাকৃতিকভাবেই বাবা-মা হতবুদ্ধির মতো তাকিয়ে থাকেন। তাদের কিছুই করার থাকে না। কখনো কখনো বাবা-মা একদম হতাশ বোধ করেন। ‘আমি কি একজন ব্যর্থ মা?’ – নিজেকে এভাবেই হয়তো জিজ্ঞাসা করেন। তবে বাচ্চার কান্না নিয়ে এতো হতাশ হওয়ার কিছুই নেই। যেসব শিশুর বয়স তিন মাসের কম, তারা এমনিতেই প্রচুর কাঁদে। বেশিরভাগ সময় কোনো কারণ ছাড়াই কান্নাকাটি করে।
৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত কান্নাকাটির পরিমাণ বেশি থাকে:
শিশু সাধারণত নিজের প্রয়োজনের কথা মুখ ফুটে বলতে পারেনা বলে কাঁদে। জন্মের প্রথম কয়েক সপ্তাহে তাদের বিভিন্ন রকম চাহিদা থাকে। এসব চাহিদার কথা জানান দিতে ও কোনো অস্বস্তি হলে সেটা বোঝাতে শিশু কান্নাকাটি করে। সে হয়তো ক্ষুধার্ত থাকতে পারে, শীত বা গরম অনুভব করতে পারে, তার ঘুম পেতে পারে, হজমে সমস্যা হতে পারে, অথবা সে হয়তো আপনার কোলের সান্নিধ্য পেতে চায়। এ সব কারণেই শিশু কান্নাকাটি করে। গবেষণায় পাওয়া গেছে, জন্মের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ শিশু এমনিতেই প্রচুর কান্নাকাটি করে। ৬ সপ্তাহ পর থেকে ধীরে ধীরে কান্নার পরিমাণ কমে আসে।
১২ থেকে ১৪ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত পেটে ব্যথা থাকতে পারে:
বাচ্চাদের উচ্চ স্বরে কান্নাকাটি করার প্রাথমিক কারণগুলোর মধ্যে পেট ব্যথা অন্যতম। পেটে ব্যথা হলে অনেক সময় এক ঘন্টার বেশি সময় ধরেও শিশু কান্না করতে পারে। বায়ুবাহী যে কোনো জীবাণু শিশুর পরিপাকতন্ত্রে আক্রান্ত হয়ে পেট ব্যথা শুরু হতে পারে। পেটে ব্যথা হলে শিশুর শরীর অনেক সময় শক্ত হয়ে যায়। অনেকে মনে করেন শিশুকে ঢেকুর তোলালে পেটের গ্যাস কমে যায়। আবার অনেকে মনে করেন শিশুকে বেশি করে পানি খাওয়ালে ব্যথা কমে যেতে পারে। তবে বেশিরভাগ ডাক্তারের মতে, শিশু জন্মের ১২ থেকে ১৪ সপ্তাহ পর্যন্ত পেট ব্যথা খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা।
কান্নার ধরন:
এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহের ভিতরেই আপনার শিশুর কান্নার ধরন এবং সময় আপনি বুঝে যাবেন। শিশু সবচেয়ে বেশি কান্নাকাটি করে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেলে। বাসায় অতিরিক্ত লোকজনের আনাগোনা হলেও শিশু কান্নাকাটি করে। শিশু ঠিক কী কী কারণে কান্নাকাটি করে এটা এক-দুই সপ্তাহ তাকে পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায়। সময়ের সাথে সাথে শিশুর কান্নার একটি সময় নির্ধারিত হয়ে যায়। কাজেই কান্না শুরু হবার আগেই ঘরের সব কাজ শেষ করে শিশুর কান্না থামানোর জন্য সময় হাতে রাখুন।
ক্রন্দনরত শিশুকে সান্ত্বনা দিন:
আপনার ছোট্ট সোনামণিকে জড়িয়ে কোলে তুলে দোল দিন। যদি আপনার সন্তান বুকের দুধ খায় তবে তাকে কান্নার সময় স্তনপান করান। খাওয়ার সময় শিশুর কান্না থেমে যায়। শিশুর ডায়পার পরিবর্তন করুন অথবা কুসুম গরম পানি দিয়ে তাকে গোসল করিয়ে দিন। শিশুকে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যান। বিভিন্ন ভাবেই আপনি নবজাতককে শান্ত করতে পারেন। ততে শিশু একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাঁদেই এবং তারপর থেমেও যায়।
নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন:
সন্তান কান্নাকাটি করলে বাবা-মা হতাশ বোধ করেন। বিশেষত আপনি যদি মা হন এবং প্রসবত্তোর বিষণ্ণতায় ভোগেন তবে শিশুর কান্না আপনাকে আরো বেশি পীড়া দেবে। এই সময়ে বাবা-মা দুজনের দুজনকে সান্ত্বনা দেওয়া উচিত। নতুন মা হিসেবে আপনি বিশ্রাম নেয়ার সময় আপনার সঙ্গী শিশুর খেয়াল রাখতে পারেন। অন্য কাউকে কিছু সময়ের জন্য শিশুর খেয়াল রাখতে বলতে লজ্জা পাবেন না। আপনার নিজেরও বিশ্রাম প্রয়োজন আছে।
রেফারেন্স:
- https://www.helpguide.org/articles/parenting-family/when-your-baby-wont-stop-crying.htm
- 2.https://www.babycentre.co.uk/a536698/seven-reasons-babies-cry-and-how-to-soothe-them