শিশুদের সাথে খেলাধুলা কীভাবে তাদের সাহায্য করে?
শিশুর স্বাভাবিক মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য মা-বাবার সাথে খেলাধুলা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে শিশুর সাথে মা-বাবার নিয়মিত মিথস্ক্রিয়া ও কার্যকলাপ চালু রাখা জরুরি। জন্মের পর প্রথম কিছু সপ্তাহে বাবা-মা ঘুমন্ত শিশুর দিকে তাকিয়ে থাকাটাকেই অনেক উপভোগ করেন। কিন্তু শিশুর বয়স বাড়তে থাকলে সে তার আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে আরো সংবেদনশীল হতে থাকে এবং ধীরে ধীরে সবকিছু বুঝতে শুরু করে। সে সময়ে তার সাথে পারস্পরিক যোগাযোগের ধরণেও পরিবর্তন আনতে হবে।
মানসিক বিকাশঃ
শিশুর উপযুক্ত মানসিক বিকাশের জন্য তাকে নানা ধরণের অভিজ্ঞতা দিতে হবে। শিশুর সাথে খেলার সময় মনে রাখবেন, আপনার শিশুর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার থেকে সে যেটুকু সরাসরি মনোযোগ পাচ্ছে সেটাই। আপনার সাহচর্য আর মনোযোগ আপনার শিশুর সাথে একটি চমৎকার আত্মীক বন্ধন তৈরী করতে সাহায্য করবে। শিশুর সাথে বন্ধন দৃঢ় করবার জন্য অনেকরকম খেলাধুলা করা যায়। যেমন, শিশুর ঘনিষ্ঠ হওয়ার একটা ভালো সময় হলো তাকে গোসল করানোর সময়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পানি দেখলে শিশুরা খুশি হয়। শিশুকে গামলায় গোসল করানোর সময় গায়ে আলতো করে পানি ছিটিয়ে দিন। শিশু বসতে শিখলে তাকে গামলায় বসিয়ে তার সাথে তার প্রিয় খেলনাগুলোও দিতে পারেন, এতে গোসল ব্যাপারটা শিশুর কাছে খুব আনন্দময় হয়ে উঠবে।
সংবেদনশীলতার বিকাশঃ
হাত দিয়ে মুখ ঢেকে, হাসিমুখে ‘মা কোথায়?’ বলে হাত ছেড়ে দিন। প্রথম বছরের শিশুদের জন্য এই লুকোচুরি দারুণ মজার একটি খেলা। শিশুরা বিস্মিত হতে ভালোবাসে, তাই শিশুদের সামনে ভেংচি কাটলে বা মজার অঙ্গভঙ্গি করলে তারা মজা পায়। একইভাবে তার প্রিয় কোনো খেলনা লুকিয়েও এই খেলা খেলতে পারেন। এ ধরনের খেলায় শিশুর কৌতুহল আর ধীশক্তির বিকাশ হবে। হামাগুড়ি দেওয়া শুরু করলে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়েও শিশুর সাথে লুকোচুরি খেলতে পারেন।
শিশুকে নিয়মিত ঘরের বাইরে নিয়ে যেতে পারেন। এতে করে সে প্রকৃতি ও পরিবেশ দেখে অভ্যস্ত হতে পারে। সুস্বাস্থ্য ও মানসিক বিকাশের জন্য খোলা আকাশ আর বাতাসের মাঝে নিয়ে গেলে শিশুরা আনন্দ পায়।
শিশুর শেখার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নাম ধরে বিভিন্ন জিনিস দেখান, এতে করে শিশু দেখা ও শোনার মাঝে সহজে যোগাযোগ করতে পারবে। যেমন বিড়াল দেখিয়ে বলতে পারেন, ‘ঐ দেখ বিড়াল; ম্যাঁও ম্যাঁও।’ এতে করে শিশুর জন্য ভাষা ও শব্দ রপ্ত করতে সুবিধা হবে।
শিশুর সাথে খেলার সময় অভিভূত হওয়ার ভান করুন, এতে শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়বে। শিশুর সাথে খেলার সময় আগে নিজে খেলুন এবং সাথে সাথে তাকেও একই কাজ করতে উৎসাহ দিন। এতে তার কোনো কাজে অংশগ্রহণ করবার ধারণাটা পোক্ত হবে।
শিশুদের সাথে খেলার মূল উদ্দেশ্য তাদের অনুভূতিগুলো জাগিয়ে তোলা, তাদের ভয় পাইয়ে দেওয়া নয়। শিশুদের মনের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়লে তারা হয় চোখ বন্ধ করে ফেলবে বা অন্যদিকে তাকিয়ে থাকবে। এই ইঙ্গিতগুলো আপনি বুঝতে ভুল করলে শিশু কাঁদতে শুরু করবে।
তাই শিশুর সাথে খেলার মূল ব্যাপার হল খেলায় অংশগ্রহণ করা, শিশুর দিকে পরিপূর্ণ মনোযোগ দেওয়া, আর তার চোখে চোখ রেখে তার আচরণের পরিবর্তনগুলো বুঝতে চেষ্টা করা।