বাসা থেকে কাজ ও পারিবারিক জীবনের মধ্যে ভারসাম্য আনা
চাকুরিরত মায়েদের জন্য ঘরে বসে অফিসের কাজ করা বেশ কষ্টসাধ্য বিষয়। সাধারণত যখন বাসা থেকে অফিস আর অফিস থেকে বাসায় ফেরা হয়, তখন একটা নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলা হয়। কিন্তু অফিসের কাজ ঘড়ি ধরে সময় অনুযায়ী বাসায় বসেই করতে হয়, আবার সেই সাথে বাসার কাজ দেখাশুনা করা এবং সন্তান ও পরিবারকে ঠিকমতো সময়ও দিতে হয় তখন দুটো জিনিসের ভারসাম্য রক্ষা করা আসলেই একটু কঠিন।
অফিসে কাজের একটা রুটিন থাকে, সেই সাথে অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে সামনাসামনি দেখা করে কাজের পরিকল্পনা করা যায়। ঘরে বসে সে সুযোগ নেই বলে অফিস এবং সহকর্মীদের সাথে বাড়তি যোগাযোগ রক্ষা করাটা জরুরি হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে পরিবারে সময় দেয়া, বাচ্চাকে দেখাশোনা করা, সবমিলিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করা একজন চাকুরিজীবী মায়ের জন্য একটু কঠিন।
তাই পরিবার ও ঘরে বসে কাজ করার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে কিছু কিছু বিষয় মেনে চলা যেতে পারে।
রুটিন মেনে চলুন:
পুরো ২৪ ঘন্টার সময়টিকে একটি নির্দিষ্ট রুটিনে ভাগ করে ফেলুন। রুটিনের ভিতর অফিসের কাজের সময়টুকু বাদ দিয়ে, বাচ্চার যত্ন, পরিবারের সাথে কিছুটা সময় ব্যয় করা ও নিজের যত্নের জন্যেও কিছুটা সময় হাতে রাখুন। ছোটো বাচ্চার মায়েদের পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। তাই ঘুমের জন্য ৬-৮ ঘন্টা বরাদ্দ রাখুন। সকালে উঠেই দিনের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে অফিসের কাজ শুরু করুন যাতে কাজের মাঝখানে বারবার আপনাকে উঠতে না হয়।
কাজ সময়মতো শেষ করুন:
বাড়িতে বসে কাজ করার সময় মাঝেমাঝে অলসতা করে সময়ের কাজ সময়ে করা হয়ে ওঠে না। এতে করে দেখা যায় চাকুরিজীবী মায়েরা অফিসের কাজে পিছিয়ে পড়েন। ফলে পরিবার ও বাচ্চাকে সময় দেয়াও কঠিন হয়ে যায়, এদিকে অফিসের কাজের চাপও বেড়ে যায়। তাই যে সময় যে কাজ হাতে রয়েছে সেটা করে ফেলুন। কাজ শেষ করে বিশ্রাম নিতে পারেন অথবা আপনার সোনামণির সাথে খেলাধুলা করতে পারেন।
দুইবেলা পরিবারের সাথেই খান:
সকালে ঘুম থেকে উঠেই নানারকম কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে সবার সাথে নাস্তা করা হয়ে ওঠে না। দুপুরের খাবারের বেলাতেও একই নিয়ম। সেজন্য বিকেলে আর রাতের সময়টা পরিবারের জন্য রাখুন। অফিস থেকে ফেরার ব্যস্ত সময়টা বেঁচে যাওয়ায় সন্ধ্যাটা বাসার লোকজনের সাথেই কাটান। রাতের খাবারও একইভাবে পরিবারের সদস্যদের সাথে গ্রহণ করুন। এতে আপনার সারাদিনের সব ক্লান্তি এক মুহুর্তেই দূর হয়ে যাবে এবং পরের দিন শুরু করার জন্য একটা প্রেরণা পাবেন।
আপনার স্বামীর সাথে বাচ্চার দায়িত্ব ভাগ করে নিন:
বাসা থেকে কাজ করার সময় আপনার সঙ্গীর সাথে দায়িত্ব ভাগ করে নিন। বাচ্চার খাওয়া-গোসল সময় মতো না হলে অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই আপনার এবং আপনার পার্টনারের কাজের সময় অনুযায়ী বাচ্চার দায়িত্ব ভাগ করে নিন। দুপুরের খাওয়া, রাতের খাওয়া, বাচ্চার সাথে খেলাধুলা করা, সব কিছুই দুজন ভাগ করে করুন। এতে করে আপনার উপর চাপ কম পড়বে, আর বাচ্চাও বাবা-মা দু’জনের সান্নিধ্য পাবে। এছাড়া নিজেরাও একটু একান্তে সময় কাটান। সপ্তাহে দুজন মিলে একটা করে ছবি দেখতে পারেন বা ভালো কোনো খাবার তৈরি করতে পারেন। দুজনের সম্পর্কটা তাতে আরও দৃঢ় হবে।
সময় বাঁচান:
বাড়িতে বসে কাজ করলে অফিসে আসা-যাওয়ার যে সময়টুকু খরচ হয়, সেটুকু বেঁচে যায়। সেই সময়টা কাজে লাগান। এ সময়টুকুতে মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করতে পারেন, এটা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো হতে পারে। নিজের সৃজনশীলতা কাজে লাগাতে পারেন এই সময়। লেখালেখি, আঁকাআঁকি বা অন্য কোনো সৃষ্টিশীল চর্চা থাকলে এই সময়টা হতে পারে আদর্শ। পরিবারের সাথে সুন্দর সময় কাটানোরও একটা সুযোগ এটা। নতুন রেসিপি চেষ্টা করে দেখতে পারেন, সবাই মিলে ছোটো-খাটো বোর্ড গেম খেলতে পারেন।
ঘরে বসে অফিসে করা চাকুরীজীবি মায়েদের জন্য একটু পরিশ্রমের। তবে ভালোমতো পরিকল্পনা করলে আর পরিবারের সবার সহায়তা পেলে আপনি কাজ ও পরিবারের মধ্যে সুন্দর একটা ভারসাম্য আনতে পারবেন।