কিভাবে আপনার শিশুর ত্বকের জন্য নিরাপদ পণ্যটি বেছে নিবেন?
শিশুর ত্বকের যত্নের জন্য নিরাপদ ও পরিচিত কোনো পণ্য কেনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের ত্বক খুবই নরম ও কোমল, তাই একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের চেয়ে শিশুদের ত্বক অনেক বেশি স্পর্শকাতর। তাই সঠিক পণ্য ব্যবহার না করলে শিশুর ত্বকে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেজন্য আপনার শিশুর জন্য একটি পণ্য ব্যবহার করার আগে কয়েকটি দিকে খেয়াল রাখা উচিত।
শিশুর ত্বকের ধরন বুঝুন
শিশুর সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশগুলোর মাঝে অন্যতম হচ্ছে তার ত্বক। তাই শিশুর ত্বকের যত্নে কোন ধরনের পণ্য ব্যবহার করবেন, সেটা নির্বাচন করার আগে আপনার শিশুর ত্বকের ধরন কেমন তা পরীক্ষা করে নেওয়া উচিৎ। কারণ সব শিশুর ত্বক সব ধরনের উপাদানের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। তবে প্রত্যেক শিশুর ত্বকই নিয়মিত ময়শ্চারাইজড এবং হাইড্রেটেড রাখা জরুরি। তাই পণ্য বেছে নেওয়ার সময় এই ব্যাপারটা মাথায় রাখা উচিত। বিশেষ করে নবজাতকের চামড়া পূর্ণবয়স্ক মানুষের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ গুণ পাতলা, সেজন্য নবজাতকের পণ্য কেনার সময় মাথায় রাখা উচিত যেন তা ত্বকের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট না করে। আরও একটি ব্যাপার, শিশুর জন্য কোনো পণ্য কেনার আগে জেনেটিক্যালি কারও ত্বকের সমস্যা আছে কি না সেটা জেনে রেখে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
শতভাগ নিরাপদ কিনা নিশ্চিত করুন
শিশুর জন্য যে কোনো ধরনের পণ্য কেনার আগে ভালোভাবে প্যাকেটের গায়ের লেখা পড়ে দেখা উচিত যে কী ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। পণ্যটি ব্যবহার করার সঠিক নিয়মাবলী, মেয়াদের তারিখ, সেফটি মার্ক এসবও পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত আপনার শিশুর জন্য ব্যবহার করার আগে। সেফটি সার্টিফিকেশন আছে কিনা সেটাও দেখা উচিত। আপনার জানা উচিত পণ্যটা এলার্জি-পরীক্ষিত কিনা। এটা সাধারণত পেছনের লেবেলেই লেখা থাকার কথা। এগুলো ভালোমতো দেখেশুনে এরপরেই পণ্য কেনা উচিত। অনেক পণ্যের গায়ে ১০০% ভাগ নিরাপদ এ ধরনের কোনো চিহ্ন থাকে না। এসব পণ্য কেনার আগে ভালোভাবে চিন্তা করে নেয়া উচিত।
ক্ষতিকর উপাদানগুলো চিনুন
শিশুর ত্বকের জন্য নিরাপদ পণ্য নির্বাচনের অন্যতম পুর্বশর্ত ক্ষতিকর উপাদান সম্পর্কে জানা। প্রাপ্তবয়স্কের ত্বকের যত্নে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর বেশ কিছু শিশুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
যেমন শিশুর ত্বকের ময়েশ্চারাইজিং এর জন্য বেবি লোশন এর বিকল্প নেই। তবে,অনেক সময় বাজারের বিভিন্ন ব্রান্ডের লোশনে প্যারাবেন নামক একটি উপাদান থাকে যেটা কসমেটিক্সে প্রিজারভেটিভ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বয়স্কদের চেয়ে শিশুদের শরীরে সেটা বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে তাই পণ্য কেনার সময় সেটি প্যারাবেন ফ্রি কি না দেখে নিন। আবার চুলের ত্বকের জন্য শ্যাম্পুতে ট্রাইক্লোসান নামে একটা উপাদান ব্যবহার করা হয়। শিশুর জন্য সেটিও ক্ষতিকর হতে পারে।সুতরাং চেক করুন যে আপনি শিশুর জন্য যে শ্যাম্পু কিনছেন তা ট্রাইক্লোসান মুক্ত।
ঠিক তেমন ভাবেই শিশুর জন্য শ্যাম্পু কেনার সময় দেখে নিন শ্যাম্পুটি ‘টিয়ার-ফ্রি’ কিনা।
শিশুদের ত্বকের জন্য ব্যবহৃত পণ্যের পিএইচের ভারসাম্য ঠিক আছে কিনা সেটাও লক্ষ্য করা উচিত। পিএইচের ভারসাম্য ঠিক থাকলে সেটা শিশুর ত্বকের ক্ষতি করবে না, এবং তাই আপনি আপনার শিশুর ত্বকে সেই পণ্য বেবহার করতে পারবেন।
প্রাকৃতিক উপাদান হতে পারে উপকারী
শিশুর ত্বকের যত্নে চাই প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরী স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টস। এগুলো শিশুর ত্বকের পুষ্টির জন্য বেশ উপকারী। শিশুর কোমল ত্বকের যত্নে জলপাই, বাদাম খুবই উপকারি। জলাপাইয়ে শুষ্ক ত্বকের জন্য হিউমেকট্যান্ট থাকে। তাছাড়া এতে থাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই। অ্যালমন্ডের ফ্যাটি এসিড শিশুর ত্বক ফেটে যাওয়া রোধ করে এবং ত্বককে আর্দ্র রাখে। আর নিম শিশুর ত্বকের চুলকানি বন্ধ করতে সাহায্য করে। আপনার পণ্য কেনার সময় এসব উপাদানের কথা মাথায় রাখতে পারেন।
ব্যবহারের আগে পরীক্ষা করে নিন
যে কোনো নতুন পণ্য শিশুর জন্য কিনলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি ব্যবহার করবেন না। আগে খুব অল্প পরিমাণ নিয়ে শিশুর কান বা বাহুর পেছনের দিকে দিয়ে ২৪ ঘন্টার জন্য রেখে দিন। যদি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন চুলকানি বা জ্বালাপোড়া না থাকে তাহলে সেটি শিশুর ত্বকে ব্যবহার করার কথা ভাবতে পারেন।
অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন
নির্দিষ্ট কোনো পণ্য ব্যবহার করতে সমস্যা হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয় কখনোই। যদি দেখেন কোনো পণ্যের কারণে শিশুর ত্বকে র্যাশ বা এলার্জি দেখা দিচ্ছে, সেটার ব্যবহার বন্ধ করে সাথে সাথে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন ।