আপনার শিশুর স্লিপিং সাইকেল ঠিক করা
নবজাতকের যত্ন নেয়া আপনার জন্য যেমন আনন্দের তেমনি উত্তেজনার। তবে নবজাতক কখনোই একটানা ৮-৯ ঘন্টা ঘুমায় না তাই অনেক ক্ষেত্রেই বাবা-মা হিসেবে ঘুমের স্বল্পতার জন্য প্রস্তুত থাকবে হবে আপনাদের।
শিশুর বয়স যত বাড়বে, আস্তে আস্তে তার ঘুমের সময়ও ঠিক হয়ে আসবে। তবে শিশুকে ৩ মাস বয়সের পর থেকে ঘুমের একটা রুটিনের ভিতর নিয়ে আসার অভ্যাস করতে হবে। কারণ স্বাস্থ্যকর খাবার এবং পর্যাপ্ত ঘুমের রুটিনের অভ্যাস ছোট থেকেই গড়ে না উঠলে শিশুর সার্বিক বিকাশও বাধাপ্রাপ্ত হবে। নিয়মিত এবং নির্বিঘ্ন ঘুমের অভ্যাস শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য যেমন সহায়ক তেমনি আপনিও কিছুটা অবসরের জন্য সময় হাতে পাবেন।
৩ মাস বয়সের পর থেকেই আপনার সন্তান একটি নির্দিষ্ট ঘুমের রুটিনের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। তাকে সেই রুটিনে অভ্যস্ত করানোর জন্য সহজ কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন। শিশুর ঘুমের চক্র ঠিক করার জন্য আপনি এই কাজগুলো করতে পারেন।
শিশুর অতিরিক্ত ঘুম আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না:
শিশুর যখন অতিরিক্ত ঘুম চলে আসে তখন সে বারবার চোখ ডলে, এদিক ওদিক তাকায় এবং শেষ পর্যন্ত কান্না-কাটি শুরু করে। শিশুর ঘুমের রুটিন সেট করতে হলে কখনোই শিশু কখন ঘুমের জন্য কাঁদবে সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না। কান্না-কাটি ও বিরক্তি শুরু করার আগেই একটা নির্দিষ্ট সময়ে তাকে ঘুম পাড়াতে চেষ্টা করুন। অনেক সময় ঘুম পেলেও বিরক্তি থেকে শিশুরা ঘুমাতে যেতে চায় না।
শিশুকে জন্মের পর থেকে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম পাড়ান:
শিশুর বয়স যখন তিন সপ্তাহ, তখন থেকেই রাতের বেলা ঘুম আর দিনের বেলা খেলাধুলা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দিনের বেলা আপনার শিশুকে লম্বা সময় ঘুমাতে দেবেন না। অল্প অল্প সময় করে ঘুম পাড়ান যাতে রাতে সে লম্বা একটা সময় ঘুমাতে পারে কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই। এতে করে রাতে ঘুম, দিনে খেলার অভ্যাস গড়ে উঠবে এবং শিশু এই রুটিনেই অভ্যস্ত হয়ে বেড়ে উঠবে। এছাড়া রাতে শিশু ঘুমের সময় ঘরের আলো একদম কম রাখুন বা ডিম লাইট জ্বালিয়ে রাখুন। এতে করে সে ঘুমের সময় এবং দিনের আলোর ভিতর পার্থক্য করতে পারবে।
খাওয়া এবং ঘুমের মধ্যে ব্যবধান রাখুন:
জন্মের পর নবজাতকেরা বেশির ভাগ সময়ই তরল খাবার খেতে খেতেই ঘুমিয়ে পড়ে। তবে শিশুর বয়স ১ মাসের পর থেকেই এ অভ্যাস আস্তে আস্তে ত্যাগ করুন। শিশুকে খাবার খাইয়ে তারপর ঘুম পাড়াতে চেষ্টা করুন অথবা খাবার খেতে খেতে ঘুমাতে চাইলে খাবার খাওয়ানো বন্ধ করুন। ঘুম থেকে উঠলে আবার খেতে দিন। তবে ঘুমের আগে শিশুকে অতিরিক্ত খাবার খাওয়াবেন না। এতে করে ঘুমের ভিতর কাশি হলে অনেক সময় বমি হবার সম্ভাবনা থাকে।
রাতে ঘুমের ভিতর খাওয়ানোর জন্য শিশুর ঘুম ভাঙাবেন না:
যদি আপনার শিশুর ওজন বয়স অনুযায়ী ঠিক থাকে তাহলে রাতে ঘুমিয়ে যাবার পর তাকে আবার ঘুম ভাঙিয়ে খাবার খাওয়াবেন না। দিনের বেলায় বারে বারে খাবার খাইয়ে খাবারের ঘাটতি পূরণ করুন। তবে শিশু যদি দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুমের কারণে খাবার কম খায় তাহলে রাতে ঘাটতি পূরণের জন্য খাবার দিন।
শিশুর ঘুমের সময়ের কাপড়:
ঘুমের সময় আরামদায়ক সুতি কাপড় না পরালে শিশুর ঘুম বারবার ভেঙে যেতে পারে। ঘুমের আগে শিশুকে ফ্রেশ তোয়ালে দিয়ে হাত মুখ মুছে পাউডার মাখিয়ে নরম ও সুতি আরামদায়ক কাপড় পরান। এতে করে শিশুও ফ্রেশ ভাবে ঘুমাতে যেতে পারবে ও অস্বস্তি বোধ করবে না।
শিশুর জন্মের পর ঘুমানোর রুটিন ও প্যাটার্ন ঠিক হতে কিছু সময় লাগে। সেই সময় পর্যন্ত আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে। কাজেই শিশুর ঘুমের রুটিন ঠিক না হওয়া পর্যন্ত শিশু যখন ঘুমায়, সেই সময় অনুযায়ী বিশ্রাম নিতে পারেন। আর শিশু যদি সাধারণ ঘুমের সময়গুলোতে না ঘুমায় বা বেশি কান্না-কাটি করে, তবে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।