শিশুসন্তানের জন্য বাসাতেই বানিয়ে নিন পাঁচটি সহজ ও স্বাস্থ্যকর খাবার
ছোট্ট সোনামণির খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার সব বাবা মা-ই রাখতে চান। কিন্তু সন্তানকে খাওয়ানো সহজ কাজ নয়। শিশুরা যেহেতু জন্মের পর থেকে তরল দুধ খেতেই বেশি অভ্যস্ত থাকে তাই চট করে শক্ত খাবার খেতে চায়না। সাধারণত ছয় মাসের পর থেকে শিশুকে শক্ত খাবার দেওয়া যায়। শক্ত খাবার দেয়ার সময় তাই পুষ্টিগুণ বিবেচনার পাশাপাশি স্বাদের খেয়ালও রাখতে হয়। এই সুস্বাদু খাবারগুলো আপনার শিশুর জন্য বাসায় তৈরি করার চেষ্টা করতে পারেন।
সবজি স্যুপ:
সবজি স্যুপ পুষ্টিগুণে ভরা একটি খাবার। এটি বানাতে যেমন সহজ তেমনি বাচ্চারা চটজলদি খেয়েও নেয়। সবজি স্যুপ আপনি গাজর, আলু, টমেটো, পালং শাক, মটরশুঁটি, ফুলকপি ইত্যাদি দিয়ে বানাতে পারেন। স্বাদের জন্য হালকা করে জিরে ভাজা মিশিয়ে দিলে শিশুরা দ্রুত খেয়ে নেবে। এই স্যুপটি বানাতে শুধুমাত্র সব সবজি ধুয়ে নিয়ে প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করে নিন বা হাড়িতে বেশি করে পানি দিয়ে সিদ্ধ করে স্যুপ বানিয়ে নিন। এই সবজিগুলো ভিটামিন এ, বি-কমপ্লেক্স, সি, কে, আয়রন এবং ফাইবারের খুব ভালো উৎস। সবজিটা ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে যেন আপনার শিশু খাবার সময় কোনো অস্বস্তি বোধ না করে।
খিচুড়ি:
খিচুড়ি শিশুদের জন্য খুব উপকারী ও সুস্বাদু একটি খাবার হলো চাল ডাল মিশিয়ে নরম খিচুড়ি। খিচুড়িতে চাল-ডালের পাশাপাশি যোগ করতে পারেন হরেক রকম সবজি ও মুরগির মাংস। খিচুড়ি একটি সুষম খাবার কারণ এতে শর্করা, ডালের প্রোটিন এবং শাক-সবজির ভিটামিন থাকে। শিশুর জন্য খিচুড়ি রান্নার প্রক্রিয়া বেশ সহজ। চাল-ডাল একসাথে ধুয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে সবজি, লবণ, হলুদ মিশিয়ে পানি দিয়ে প্রেসার কুকারে অথবা হাড়িতে রান্না করুন। শিশুর জন্য হলুদ খুব উপকারী একটি মশলা কারণ হলুদ এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং এর এন্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য শিশুর শরীরে ব্যাকটেরিয়াল আক্রমণ প্রতিরোধ করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মুরগির মাংসে আছে প্রোটিন এবং এটির লৌহ উপাদান শরীরে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে।
ফলের পিউরি:
শক্ত খাবার শুরুর সময় ফলের পিউরি শিশুদের জন্য একটি দারুণ মজাদার ও পুষ্টিকর খাবার। শিশুরা অনেক সময় অনেক ধরনের ফলও খেতে চায়না। তাদের জন্য সব ফল একসাথে মিশিয়ে পিউরি বানিয়ে খাওয়ানো খুব সহজ। কলা, নাশপাতি, আম, স্ট্রবেরি, খেজুর এই ফলগুলো দিয়েই ফলের পিউরি বানিয়ে নিতে পারবেন।
আপেল বা নাশপাতি জাতীয় ফল হালকা সিদ্ধ করে নিয়ে বাকি সব নরম ফলগুলো চটকে ব্লেন্ডারে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিলেই তৈরী হয়ে গেলো ফলের পিউরি। ফলে সব ধরনের ভিটামিনের পুষ্টিগুণ থাকায় শিশুর খাদ্য তালিকায় প্রতিদিনই ফল থাকতে পারে।
কচি মুরগির স্যুপ:
শিশুদের জন্য আরেকটি উপাদেয় খাবার হলো কচি মুরগির স্যুপ। মুরগি শিশুদের শরীরে আমিষের অভাব পুরণ করতে খুবই কার্যকর একটি খাবার উপাদান। শিশুর শরীরে হাড় গঠনে মুরগির মাংস কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এছাড়া শিশুর ব্রেইন গঠন, রক্ত সঞ্চালন ইত্যাদিতেও মুরগির মাংস জরুরি। তাই খাদ্য তালিকায় সপ্তাহে তিন দিন অন্তত ছোট টুকরা করে মুরগির স্যুপ এবং মাংস খাওয়াতে হবে। শিশুদের জন্য মুরগির স্যুপ রান্না করতে মশলার ব্যবহার সীমিত রাখা উচিত। একদম ছোট এক কোয়া রসুন, এক টুকরো আদা, অল্প একটু হলুদ ও জিরা গুড়া এবং লবন দিয়ে মুরগির মাংস কিছুক্ষণ ভেজে নিয়ে অনেক পানি দিয়ে সিদ্ধ করেই শিশুকে খেতে দিন। এটি আপনার শিশুর জন্য অত্যন্ত সুস্বাদু স্যুপের কাজও করে।
ডিমের পুডিং:
ডিমের পুডিং যে কোনো বয়সী মানুষেরই খুব পছন্দের একটি খাবার। ছোট শিশুদের জন্য এই খাবারটি যেমন মজাদার তেমন পুষ্টিকরও। ডিমের পুডিং এ ডিম, দুধ ও চিনি থাকে যা শিশুর শরীরের আমিষের অভাব পূরণ করে। অনেক শিশুই সরাসরি ডিম বা দুধ খেতে চায় না। সেক্ষেত্রে এভাবে পুডিং বানিয়ে খাওয়ালে দুধ ও ডিমের চাহিদা সহজেই পূরণ হবে।
শিশুকে টানা একই রকম খাবার খাওয়ালে তার বিরক্তি চলে আসতে পারে। সেজন্য এই খাবারগুলোর পাশাপাশি শিশুর জন্য বাসাতেই আরও নতুন, স্বাস্থ্যকর ও বৈচিত্র্যময় খাবারের ব্যবস্থা রাখতে পারেন।