যেসব প্রাকৃতিক উপাদান শিশুর ত্বকে ফুসকুড়ি দূর করতে সহায়তা করে
শিশুর ত্বকের যত্নে একচুলও ছাড় বাবা-মা দিতে চান না। স্বাভাবিকভাবেই আপনার ছোট্ট সোনামণির ত্বক অন্যদের তুলনায় বেশি সংবেদনশীল থাকে। তাই তার ত্বক পরিচর্যায় চাই আলাদা যত্ন।
শিশুর নরম ও কোমল ত্বকের পরিচর্যার জন্য আমরা খুঁজি সবচেয়ে নিরাপদ উপাদান। যা কি না শিশুর ত্বকে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই পুষ্টি যোগাবে। তাই শিশুর ত্বকের যত্নে এমন সব জিনিস বেছে নিতে হবে যা প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরী।
১। আলমন্ড:
শিশুর সংবেদনশীল ত্বকের জন্য আলমন্ড দারুণ উপকারী। আলমন্ডে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ই যা শিশুর ত্বকের শুষ্কভাব দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন বি, ভিটামিন কে, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম। তাই এটি শিশুর ত্বকের গভীরে পৌঁছে পুষ্টি যোগায়, ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাই নবজাতকের জন্য এমন সব প্রসাধনী বেছে নিন যাতে আলমন্ডের পরিমাণ বেশি।
২। অলিভ:
অলিভ বা জলপাই আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত একটি ফল। তবে এটা শুধুমাত্র খাওয়া হয় না, ত্বকের পরিচর্যার কাজেও ব্যবহৃত হয়। জলপাই তেল একটি বহুল ব্যবহৃত পণ্য যা শিশুর ত্বকে মালিশ করতে ব্যবহার করা হয়। শিশুর শরীরে মালিশের অপরিহার্য ভূমিকা রয়েছে। মালিশ শিশুর স্বাস্থ্যে উন্নতি ঘটায় ও শিশুকে ঘুমাতে সাহায্য করে। জলপাইয়ে রয়েছে ফেনোলিক এন্টিঅক্সিডেন্ট যা শিশুর হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। এছাড়া শিশুর ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে। তাই অলিভ সমৃদ্ধ যে কোনো প্রসাধনী শিশুর ত্বকের জন্য উপযোগী।
৩। সরিষার তেল:
শিশুর ত্বকে বহু ব্যবহৃত একটি পণ্য হলো সরিষার তেল। শিশুর শরীরে সরিষার তেল মালিশ রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এটি শশু শরীরে তাপমাত্রা ধরে রাখতে বিশেষভাবে সহায়ক। তাই শিশুর সর্দি-কাশি হলে এই তেলের মালিশ করা হয়। এই তেলে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য যা শিশুর ত্বকে অনেক ধরনের ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৪। ল্যাভেন্ডার:
ল্যাভেন্ডারের সৌরভ শিশুকে আনন্দ দেয়। ল্যাভেন্ডার প্রাকৃতিকভাবেই ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। এটি প্রাকৃতিকভাবেই জীবাণুনাশক। ডায়পার র্যাশ শিশুর ত্বকের একটি প্রধানতম সমস্যা। ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল ডায়পার র্যাশ প্রতিরোধ করতে বিশেষভাবে সহায়ক। এর এন্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য ডায়পার র্যাশ দ্রুত নিরাময় করে। তাই ল্যাভেন্ডারের তৈরী সামগ্রী শিশুর ত্বকে ব্যবহার করা যায়।
৫। অ্যাভোক্যাডো:
শিশুর ত্বক স্বাভাবিকভাবেই বড়দের চাইতে কোমল থাকে। আমরা না চাইলেও অনেক সময় বাইরে রোদে শিশুকে নিয়ে যেতে হয় আমাদের। কিন্তু শিশুর কোমল ত্বকে সরাসরি কোনো সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করা উচিত নয়। অ্যাভোক্যাডোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, যা শিশুর ত্বকে র্যাশ কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া অ্যাভোক্যাডো সমৃদ্ধ পণ্য ব্যবহার করলে প্রাকৃতিকভাবেই শিশুর জন্য এটি সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে, তাই রোদের জন্য শিশুর শরীরে র্যাশ ওঠার সম্ভাবনা কম থাকে।
৬। জোজোবা অয়েল:
জোজোবা অয়েলে প্রাকৃতিকভাবেই রয়েছে শিশুর র্যাশ দূর করার উপকরণ। শুধুমাত্র যেসব স্থানে গরমে র্যাশ ওঠে সেসব স্থানে নিয়মিত লাগালে র্যাশ দূর হয়।
শিশুর ত্বকে র্যাশ একটি খুবই সাধারণ সমস্যা। শিশুকে যদি সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যায় তবে র্যাশ এর সমস্যা অনেকটা এড়ানো যায়। তাছাড়া শিশুকে সবসময় আরামদায়ক কাপড় পরানো উচিত। শিশুর ত্বকে কোনো ধরনের ক্ষতিকর কেমিকেলযুক্ত পণ্য ব্যবহার করা উচিত নয়। তারপরেও র্যাশ এর সমস্যা বেড়ে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শিশুদের জন্য চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এমন কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং সে অনুযায়ী শিশুর চিকিৎসা করান।
আপনার শিশুর যত্ন আপনার উপর নির্ভর করে। আপনার শিশুর ত্বকের যত্নে সবচেয়ে নিরাপদ পণ্য আপনাকেই নির্বাচন করতে হবে। তাই শিশুর ত্বকের যত্নে এই গরমে সঠিক পণ্য নির্বাচন করুন। যেটা ব্যবহারে আপনার শিশুর শরিরে র্যাশ উঠবে না, এবং ত্বকের পরিচর্যা সঠিকভাবে হবে। শুধুমাত্র পরিচর্যা নয়, শিশুর ত্বকে সঠিক পুষ্টি যোগান দেয়াও জরুরি। আপনার সন্তানকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান, নিয়মিত খেলাধুলা করুন এবং গরমে তার শরীরের যত্ন নিন।