আপনার শিশু খুব সকালে উঠে যাচ্ছে, এখন উপায়?
বাচ্চা কোনো ঝামেলা ছাড়াই টানা ঘুমাবে এবং সময়মতো ঘুম থেকে উঠবে, এই ইচ্ছাটা সব বাবা মারই কমবেশি থাকে। কিন্তু বেশির ভাগ বাবা মার জন্য এটা স্বপ্নই থেকে যায়, কারণ শিশুদের ঘুম নিয়ে গ্রীষ্মকালের ঝড়ের মতোই অননুমেয়। সমস্যাটা বেড়ে যায় যখন সূর্য ওঠার আগে আপনার শিশু ঘুম থেকে উঠে বসে থাকে। এই ঘটনাটা মোটামুটি সাধারণ। এটা বাবা মার ঘুমেরও দফারফা হয়ে যাওয়ার মত দুঃস্বপ্ন। তবে এটা সমাধান করতে গেলে আগে বুঝতে হবে কেন আপনার শিশু ভোরবেলায় উঠে বসে থাকে।
এই প্রশ্নটার উত্তর দেওয়া সহজ নয়। আপনার শিশু যদি ভোরবেলায় উঠে যায় সেটার দুইটি কারণ হতে পারেঃ হয়তো সে অনেক বেশি ঘুমাচ্ছে অথবা তার ঘুম ঠিকমতো হচ্ছে না। সে অনেক বেশি ঘুমানোর মানে হয়তো সে ক্লান্ত আর তার ঘুম ঠিকমতো না হওয়ার কারণ হতে পারে সে হয়তো অতিক্লান্ত। সবার আগে বোঝার চেষ্টা করুন সে স্বাভাবিক আচরণ করছে কি না অথবা তার রুটিন ঠিকমতো অনুসরণ করছে কি না। বাচ্চারা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে স্বাভাবিকভাবেই বেশি ঘুমাবে। সাধারণত রাত আটটায় ঘুমিয়ে বাচ্চা যদি ভোর ছয়টায় উঠে তাহলে সেটাকে স্বাভাবিক বলা যায়।কিন্তু সে যদি পাঁচটার আগে উঠে বসে থাকে এবং ডায়পার চেঞ্জ বা খাওয়ানোর পর ও ঘুমাতে না যায় তাহলে আপনি ধরে নিতে পারেন সেটা স্বাভাবিক আচরণ নয়। ছয় মাস বয়সী একটা বাচ্চা সাধারণত রাতে ১০-১২ ঘন্টা ঘুমায় আর দিনে সেটা ৩-৫ ঘন্টা হতে পারে। আর এক থেকে আড়াই বছর বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সারাদিন মিলে ঘুমের সময় ১১-১৪ ঘন্টায় নেমে যেতে পারে। বাচ্চা কেন সকালে উঠে সেটা সমাধানের আগে কয়েকটা ব্যাপার বুঝতে হবে।
প্রথমত, আপনাকে আপনার সন্তানের ঘুমের সূচিটা ঠিকমতো চেক করে নিতে হবে। যদি তার ঘুম কম হচ্ছে বলে মনে হয় তাহলে আগে ঘুম পাড়ানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন তার ঘুমের সময় ১০ মিনিট করে এগিয়ে আনতে পারেন। এভাবে এক সপ্তাহ চালিয়ে ফলটা দেখতে পারেন কোনো ইতিবাচক ফল আসে কিনা।
আপনার যদি মনে হয় শিশু বেশি ঘুমাচ্ছে তাহলে উল্টোটা করতে পারেন। আপনার শিশুকে একটু দেরিতে ঘুম পাড়াতে পারেন, আর প্রতিদিন একটু একটু করে সময়টা পেছাতে পারেন।
আপনি শিশুর দিনের বেলার ঘুমের সময়টাও অ্যাডজাস্ট করতে পারেন। অনেক শিশু দিনের বেলা বেশ আগে আগে ঘুমায় সেজন্য রাতেও সময়ের আগে ঘুমিয়ে যায়, এতে পরদিন বেশি তাড়াতাড়ি উঠে যায়। আবার কোনো শিশু লেট ন্যাপটা এমন সময় নেয় যেটা তার বেডটাইমের কাছাকাছি। সেজন্য সে সকালে উঠে যেতে পারে। শিশুর দিনের বেলা ঘুমের সময় সামান্য পরিবর্তন করে দেখতে পারেন যেন সে কোনো অবস্থায় অস্বস্তি অনুভব না করে। যে কোনো কিছু করার আগে আপনার শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে নেওয়া উচিত।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে শিশুর ঘুম-বান্ধব একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা। শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে অনেক বেশি সেনসেটিভ। সামান্য শব্দেই তাদের ঘুম ভেঙে যেতে পারে। ভোরবেলা কোনো শব্দে যাতে ঘুম ভেঙে না যায় সেজন্য জানালা বন্ধ রাখতে পারেন। এতে কাজ না হলে জানালার ওপর কম্বল দিয়ে ঢেকে দিন। দরকার হলে শব্দ শুষে নেওয়ার জন্য নয়েজ মেশিনও ব্যবহার করতে পারেন। খেয়াল রাখবেন, যেন আপনার শিশু সূর্যের আলোর সরাসরি সংস্পর্শে না আসে। পুরোপুরি অন্ধকার এড়ানোর জন্য ডিম লাইট জাতীয় কিছু ব্যবহার করতে পারেন।
শিশুর খিদেও খুব সকালে ঘুম ভেঙে যাওয়ার আরেকটা বড় কারণ। আপনার সন্তান যদি পাঁচটার সময় উঠে বসে থাকে তাহলে সকাল সকাল নাশতা করতে হবে আপনার দুজনেরই। আপনি সকালের নাশতাটা তাকে কিছুক্ষণ পর দিতে পারেন, তাহলে সেটা খাওয়ার জন্য সে আরেকটু পরে ওঠার অভ্যাস করতে পারে। রাতে ঘুমানোর আগে দই, নাট বাটার টোস্ট, হামাসের মতো হাই প্রোটিন কিছু খেতে দিতে পারেন যাতে খিদের জন্য সকালে ঘুম ভেঙে না যায়। কী ধরনের খাবার আপনার শিশুর জন্য ভালো হবে সেটা ঠিক করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নেওয়া উচিত।
এটা সত্যি, সময়ের সাথে সাথে আপনার শিশু খাপ খাইয়ে নেবে। এই সময়ের মধ্যে আপনাকে শুধু একটু ধৈর্য ধরতে হবে আর আপনার শিশুর প্রক্রিয়াটা যাতে সহজ হয়, সেজন্য সাহায্য করতে হবে।