গর্ভাবস্থায় আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া
গর্ভকালীন অবস্থাকে অনেকটা ‘ইমোশনাল রোলারকোস্টারের’ সাথে তুলনা করা যায়। এই যাত্রায় আনন্দ, রোমাঞ্চের সঙ্গে মিশে থাকে স্ট্রেস ও ভীতি। তবে এই সময়ে একটা ব্যাপার অনেক সময়ই নজর এড়িয়ে যায়, সেটা হচ্ছে প্রসূতি মায়ের মানসিক অবস্থা। শারীরিক অবস্থার পাশাপাশি মায়েদের মানসিক অবস্থা বোঝাটাও জরুরি। আপনি যদি একজন প্রসূতি মা হন, তাহলে নিজেকে মানসিকভাবে ফিট রাখার জন্য সহজ কিছু পরামর্শ মেনে চলতে পারেন।
১) নিজেকে প্রকাশ করুন
গর্ভাবস্থায় নিজেকে প্রকাশ করতে কখনো দ্বিধা করবেন না। মনের কথা খুলে বলুন, সবকিছু নিয়ে কথা বলুন। মাতৃত্বপূর্ব বিষণ্ণতা গর্ভাবস্থায় বেশ সাধারণ একটা ঘটনা। কিন্তু অনেক সময় মায়েরা সেটা স্বীকার করতে দ্বিধা করেন। আপনার পার্টনার, ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা স্বজনদের সাথে কথা বলুন। আপনাকে যদি ঘরে থাকতে হয়, তাহলে অনলাইনে এমন অনেক গ্রুপ আছে যেখানে আপনি নিজের মনের ভাব আদানপ্রদান করতে পারবেন। তাদের সাথে নিজের এই যাত্রাটা ভাগাভাগি করুন। আগের চেয়ে দেখবেন অনেক বেশি নির্ভার লাগবে আপনার। যেই কাজটা করতে আপনার ভালো লাগে, সেটা করুন। বন্ধুদের সাথে গিয়ে ম্যুভি দেখে আসুন, বা আপনার বাসাতেই তাদের সঙ্গে আড্ডা দিন। প্রতিদিন মজার কিছু পড়ুন। অনেক হাসুন, সেটা অনেক বেশি সাহায্য করবে আপনাকে।
২) ভালোমতো ঘুমান
প্রসূতি মায়েদের জন্য ঘুমের সমস্যাও বেশ সাধারণ একটা ব্যাপার। কিন্তু ভালো একটা ঘুম আপনার চাপ অনেক কমিয়ে দেবে। বৈজ্ঞানিকভাবেও এটা পরীক্ষিত। ‘ঘুমানোর সময় মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটার ঠিকঠাক রিস্টোর হয় যেটা জেগে থাকার হয় না,’ বলেছেন নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হসপিটালের অবস্টেটরিক্স বিভাগের প্রধান পরিচালক কিথ এল্ডেমান। আপনার ভ্রুণের সাইজ-শেপ ও বিকাশ কেমন হবে সেটা আপনার ঘুম ঠিক করে দিতে পারে।সেজন্য প্রতিদিন অন্তত ৬-৮ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ভালো একটা ঘুমের জন্য আপনার বিছানাও আরামদায়ক করুন, চেষ্টা করুন ঘুমানোর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে কিছু না খাওয়ার। ঘুমানোর আগে আগে ভারি খাবার খেলে হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেটা আপনাকে অনেক বেশি সময় জাগিয়ে রাখতে পারে।
৩) ‘ কৃতজ্ঞতা ’ ডায়েরি রাখুন
মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থায় ইতিবাচক থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চারপাশ থেকে আপনার আনন্দের উপলক্ষ খুঁজে নিতে হবে। একটা ‘কৃতজ্ঞতা’ ডায়েরি বা জার্নাল রাখলে আপনার মানসিকতা আরও বেশি ইতিবাচক হতে পারে। ঘুমানোর আগে আজ কী কী ভালো কাজ করলেন সেটা লিখে রাখতে পারেন। একইভাবে আপনি কারও কাছ থেকে কী ছোট ছোট উপকার পেলেন সেটাও লিখে রাখুন। ছোট্ট একটা ঘটনাই কিন্তু আপনার মন ভালো করার জন্য যথেষ্ট।
৪) সচল থাকুন
গর্ভকালীন সময়ে একদম অলস হয়ে বাসায় বসে থাকবেন না। যতটা সম্ভব সচল থাকার চেষ্টা করুন। সকালে পার্কে একটু হাঁটা বা বিকেলে আশেপাশে আরেকটু ঘুরে আসলে দেখবেন মন অনেকটাই ভালো থাকবে। ব্যয়াম করলে আপনার শরীর থেকে আরও বেশি এন্ডরফিনস বের হবে যেটা আপনার মনকে আরও চাঙা রাখবে। সেজন্য প্রতিদিন কোনো না কোনো ব্যয়াম করার চেষ্টা করুন। প্রেগনেন্সি ইয়োগা হতে পারে ব্যয়ামের সাথে সামাজিক মেলামেশারও ভালো একটা উপলক্ষ। নিয়মিত ও নিরাপদ অনুশীলন হিসেবে সাঁতারের কথাও ভাবতে পারেন।
৫) সুষম খাবার খান
ব্যালান্সড ও স্বাস্থ্যকর ডায়েট আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে। খাদ্য হচ্ছে শুধু আপনার জন্য নয়, আপনার অনাগত সন্তানের জন্যও জ্বালানি। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিজের ডায়েট ঠিক করুন, প্রচুর শাকসব্জি ও ফলমুল খান। প্রোটিনের পরিমাণ ঠিক রাখতে আপনার প্রিয় মাছ বা মাংসও খেতে পারেন।