ঘরের ভিতর শিশুর সাথে সময় কাটাতে ৫টি মজাদার সৃজনশীল খেলা
জন্মের পর থেকে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার মাধ্যমেই শিশুর মনোজগতের বিকাশের শুরু হয়। স্কুলে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় তার, কিন্তু আসলে শিক্ষাটা শুরু হয়ে যাতে আরও আগেই। শিশুকে তাই ছোট থেকেই বিভিন্ন সৃজনশীল খেলার সাথে পরিচয় করে দেয়াটা জরুরি। নিত্যনতুন খেলাধুলা ও হাসি-আনন্দের মধ্যে থেকে বড় হলে শিশুর বুদ্ধির পূর্ণ বিকাশ ঘটে।
এখনকার সময় বাইরে বেরুনোর সুযোগ যখন কম, ঘরেই আপনাকে শিশুর সাথে সময় কাটাতে হবে। সেজন্য তার সঙ্গে খেলাধূলার সময় মজা আর আনন্দের সঙ্গে যেন তার বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশও কিছুটা ঘটে, সেটা খেয়াল রাখা জরুরি।
পাজল গেম:
শিশুর মনোজগতের বিকাশের জন্য সবচেয়ে উপযোগী খেলাগুলোর একটি হলো পাজল গেম। ঘরে বসেই বেশ অনেকটা সময় ধরে এই গেম খেলা যায়। পাজল গেম খেলতে গেলে এমনিতেই একটু বুদ্ধি প্রয়োগ করতে হয়। এটা একটু চ্যালেঞ্জিং হলেও আপনার শিশুর জন্য খুব কঠিন হবে না। পাজল সেট ঘরে থাকলে সেটি টুকরো টুকরো করে এলোমেলো করে দিন। এরপর আপনি ও আপনার শিশু একই সাথে একটি ছবি মেলাতে শুরু করুন। খেয়াল করুন সে মেলাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে কি না। সমস্যায় পড়লে তাকে সাহায্য করুন। এভাবেই প্রতিদিন কতো কম সময়ে ছবি মিলানো যায় সেই খেলা খেলতে থাকুন।কোনো জিনিসের আকার-আকৃতি চেনা, মনযোগ ধরে রাখা, লক্ষ্য ঠিক করা এবং সবচেয়ে যেটা জরুরি- প্রাপ্তির আনন্দ, এই ব্যাপারগুলো পাজল গেম থেকে আপনার শিশু শিখতে পারবে।
পেপার বল থ্রোয়িং:
ঘরে বসে বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে আরেকটি মজার খেলা হল পেপার থ্রোয়িং। ছোট বাচ্চারা এমনিতেই একটু লাফালাফি-দৌড়াদৌড়ি পছন্দ করে। শিশুর হাতে বেশ কিছু কাগজের ছোট বল বানিয়ে দিন। তারপর একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে একটি ঝুড়ি রেখে বলগুলি ঝুড়ির ভিতর ছুড়ে ফেলতে বলুন। শিশুর পাশাপাশি আপনিও খেলায় অংশগ্রহণ করুন। কে কতোগুলো বল ঝুড়িতে ফেলতে পারলেন সেই প্রতিযোগিতা করুন, এতে শিশু আনন্দ পাবে। যে বলগুলি ঝুড়িতে শিশু ফেলতে পারলো না, সেগুলি তাকে কুড়িয়ে আনতে বলুন। এতে শিশুর যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা অভ্যাস গড়ে উঠবে না।
টাচ অ্যান্ড ফিল:
এই খেলাটিও দারুণ মজার। ঘরে বসে বাচ্চাকে বিভিন্ন জিনিসের নাম শেখানোর জন্য এই খেলাটি নিয়মিত খেলা যায়। খেলার জন্য প্রথমে শিশুর চোখ আলতো করে বেঁধে দিন। তারপর তার হাতের কাছে তার পছন্দের জিনিসগুলি দিয়ে এক এক করে নাম বলতে বলুন। বিভিন্ন ফল ও সবজি দিয়ে এই খেলাটি খেললে শিশু সহজেই এসব ফল ও সবজি চিনে যাবে। আলাদাভাবে মুখস্ত করাতে হবে না। এছাড়া আপনি শিশুর সাথে খেলায় অংশ নিয়ে পয়েন্ট সিস্টেম করে একটা পুরস্কার দিলে বাচ্চা খেলতে আরও মজা পাবে।
প্লে ডো:
আজকাল বাচ্চাদের ভিতর প্লে ডো খেলাটি ইনডোর গেম হিসেবে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একটি প্লে ডো সেটে বেশ কয়েক রঙের প্লে ডো থাকে। তাই বাচ্চারা বিভিন্ন রঙের সাথে খেলার ছলেই পরিচিত হয়ে যায়। এছাড়া প্লে ডো সেটে ডো ছাড়া আরো নানাধরনের গ্যাজেট থাকে যেগুলো দিয়ে শিশু মনের মাধুরি মিশিয়ে খেলনা বানাতে পারে। এটা নরম বলে আঙুল ব্যবহার করে যে কোনো আকৃতি দেওয়া যায়। এর মাধ্যমে পদার্থ কীভাবে গঠন হয় তার একটা প্রাথমিক ধারণাও পেয়ে যাবে আপনার শিশু, এমনকি বর্ণমালা ও গণিতের হাতেখড়িও এখান থেকে হতে পারে।
রং-তুলি দিয়ে আঁকাআঁকি:
সৃজনশীল খেলার ভিতর সবচেয়ে পুরোনো অথচ এখনো মজার খেলা হলো রঙ-তুলির আঁচড়। সব বাবা-মাই চায় তাদের শিশুসন্তান নিজেদের অনুভূতির সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটাক। সেজন্য শিশুদের আঁকাআঁকির মতো ভালো মাধ্যম কমই আছে। আপনার শিশুর হাতে নন টক্সিক কালার ও ক্রেয়ন তুলে দিন। শুরুতে সে আশেপাশের অনেক কিছু নষ্ট করে ফেললেও ধীরে ধীরে রঙ নিয়ে খেলা করতে শিখে যাবে। মাঝে মাঝে রঙ তুলি নিয়ে আপনিও বসে যাবেন তার সাথে আঁকতে, সেটাতে আপনার শিশু আরও বেশি আনন্দ পাবে।