যেভাবে বুঝে নেবেন শিশুর না বলা ভাষা
আপনার শিশু যখন হাঁটার পর কথাও বলতে শুরু করেছে, আপনি মনে মনে হয়তো আশ্বস্ত হয়েছেন, ‘যাক, এবার অন্তত মুখে কিছু বলতে পারবে’। কিন্তু এরপরও শিশুরা শারীরিক ভাষায় ভাবের আদান প্রদান করতে পছন্দ করতে পারে। বাবা-মা হিসেবে এই ‘কোড-ল্যাঙ্গুয়েজ’ বোঝা আপনার জন্য বেশ জরুরি।
আপনার শিশু হয়তো কোথায় বসবে, কী খাবে বা কোন কাপড়টা পরবে এসব সহজেই আপনাকে মুখের ভাষায় বুঝিয়ে বলবে। কিন্তু তার মনে যদি জটিল কোনো চিন্তা আসে সেটা সে সঠিক ভাষায় হয়তো আপনার কাছে প্রকাশ নাও করতে পারে। এখন আপনার শিশুর সেরকম কিছু সম্ভাব্য ব্যবহারের কথা বলা হবে যেগুলো আপনার পূর্ণ মনযোগ দাবি করে ।
শিশু যখন আপনার চোখের দিক তাকিয়ে কথা বলছে না:
আপনার শিশু যদি আপনার চোখে চোখ না রাখে তার অর্থ হচ্ছে, সে লজ্জা পাচ্ছে। লজ্জা মানবশিশুর সহজাত প্রবৃত্তি। যে কোনো কারণেই শিশু এরকম করতে পারে। হয়তো সে বাইরের মানুষের সামনে যেতে চায় না। অপরিচিত কারও সঙ্গে সে মিশতে চাচ্ছে না। এমনও হতে পারে যে সে ভুল কিছু করেছে, এজন্য সে লজ্জা পাচ্ছে।
যদি বাইরের মানুষের সামনে সে এরকম করে, তাহলে তাকে আস্তে আস্তে সহজ করার চেষ্টা করুন। জোর করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। আর কোনো দুষ্টুমির জন্য হলে তাকে বোঝান সে যা করেছে এগুলো উচিত নয়। যদি সে কোনো জিনিস নষ্ট করে, তাকে শান্ত ভাবে শিখিয়ে দিন যে জিনিস নষ্ট করা ভালো নয়। কোনো ভুল করলে সেটা স্বীকার করতে উৎসাহিত করুন। এরকম কাজের জন্য তার জন্য ছোট্ট কোনো পুরস্কারের ব্যবস্থাও করতে পারেন।
অন্য শিশুদের সামনে সে লজ্জা পায়:
আপনার শিশুর সামনে অন্য কোনো শিশুকে কোলে নিলে বা আদর করলে যদি আপনার শিশু চিৎকার ও কান্নাকাটি করে তার অর্থ হচ্ছে, সে আপনার মনযোগ আরও বেশি করে চাচ্ছে। শিশুরা এ ধরনের আচরণ তখন বেশি করে যখন সে মনে করে যে আপনার পূর্ণ মনোযোগ তার প্রতি নেই। বিশেষ করে বাবা মায়েদের ওপর অধিকারের ব্যাপারে শিশুরা বেশি সচেতন থাকে।
শিশুর মধ্যে এমন আচরণ দেখলে তাকে বারবার কোলে নিয়ে আদর করুন। তাকে অনুভব করান যে আপনি তার মা ও আপনি সবসময় তার সাথে আছেন। কিন্তু পাশাপাশি অন্য বাচ্চাদেরও আদর করলে তার প্রতি অবহেলা হবে না। অন্যদের প্রতি ভালো আচরণে তাকে উৎসাহিত করুন।
শিশুকে কোনো খাবার বা খেলনা দেয়ার আগে যখন সে দুই পা দিয়ে লাফালাফি করে:
শিশুরা মাত্রই চঞ্চল এবং অধৈর্য হয়। তার কোনো কিছু চাই মানে এখনি চাই। তা সেটা খাবার হোক, খেলনা হোক, বাইরে বেড়াতে যাওয়া হোক অথবা ঘুমানো হোক। শিশু মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম থাকে বলেই তারা যে কোনো কিছু চাইবার সময় বা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত পা ছুঁড়ে ছুঁড়ে বোঝায় যে সে কী চায়।
আপনার শিশুর এরকম আচরণ লক্ষ্য করলে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করুন। বুঝে নিতে চেষ্টা করুন সে কোন জিনিসটি চাচ্ছে। তবে সব সময়ই ‘চাহিবামাত্র’ সবকিছু তার হাতে তুলে দেবেন না। তাকে বুঝতে দিন যে, সব সময়ই চাহিবামাত্র সবকিছু পাওয়া যায় না। এভাবে ধীরে ধীরে বড় হলে আরও বেশি সহনশীল আচরণ করবে ও বিবেচনাবোধ দেখাবে।
শিশু যখন খেলনা ছুড়ে বা ভেঙে ফেলে:
এটা খুবই কষ্টদায়ক এবং চিন্তার বিষয় যখন শিশু খেলনা ছুড়ে ফেলা বা ভেঙে ফেলার মতো অস্বাভাবিক আচরণ করে। তবে শিশু এরকম আচরণ করলে এই আচরণের পিছনের কারণ আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে।
শিশু যখন রেগে গিয়ে এরকম আচরণ করছে তার মানে হলো, সে হয়তো শারীরিকভাবে সুস্থ বোধ করছে না। অথবা সে আরো বেশি মনোযোগ আপনার কাছ থেকে চাচ্ছে। এরকম সময় খুব বেশি চিন্তিত হবেন না, আর আহেতুক শিশুকে বকাবকি করবেন না। এই ধরনের আচরণ শিশুর সহজাত প্রবৃত্তির মধ্যেই পড়ে। আপনি বরং আপনার শিশুকে বেশি বেশি সময় দিন। তার পছন্দের খেলনাগুলি সাথে নিয়ে খেলতে শুরু করুন। দেখবেন আপনার শিশু আবার আগের মতো স্বাভাবিক আচরণে ফিরে গেছে।
প্রতিটি শিশুই তার নিজস্ব আচরণে একেবারেই অনন্য। তবু কিছু সাধারণ আচরণগত মিল সব বাচ্চাদের ভিতরেই পরিলক্ষিত হয়। সেই আচরণগুলো আপনাকে সঠিকভাবে বুঝে শিশুর অপ্রকাশ্য মনোভাব বুঝে নিতে হবে। সেজন্য আপনাকে মনযোগের সঙ্গে আপনার শিশুর কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ধৈর্য ধরতে পারলে আপনি আপনার শিশুর সাথে আরও ভালোভাবে ভাবের আদানপ্রদান করতে পারবেন।