গ্রীষ্মে সাধারণ শিশুর ত্বকের সমস্যা এবং আমরা কীভাবে সেগুলি সমাধান করতে পারি
শিশুদের ত্বক বড়দের তুলনায় একটু বেশি সংবেদনশীল হওয়ায় গরমে শিশুর ত্বকে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক কম হবার কারণেও এমনটা হতে পারে। শিশু ত্বকে প্রদাহ, জ্বালা-পোড়া, ঘামাচি, র্যাশ শিশুর অস্বস্তির অন্যতম প্রধান কারণ, যার জন্য শিশু অস্থির হয়ে কান্না-কাটি করে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে অনেক ক্ষেত্রেই। তাই গরমে আপনার ছোট্ট সোনামণির ত্বকের যত্নে আপনাকে আগে থেকেই কিছুটা সচেতন থাকতে হবে। তারপরেও গরমে যেসব সাধারণ ত্বকের সমস্যা আপনার শিশুর শরীরে দেখা দেয় সেগুলোর জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিকার নিতে এবং ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে ভুলবেন না।
সানবার্ন:
শিশুর সংবেদনশীল ত্বকে সানবার্ন খুব সাধারণ একটি সমস্যা। যেহেতু শিশুর ত্বক খুবই সংবেদনশীল হয় তাই সহজেই এটা সানবার্নে আক্রান্ত হতে পারে। এর ফলে শিশুর পরবর্তী জীবনে মারাত্মক ধরনের স্কিন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
শিশুর ত্বকে সানবার্ন দেখা দিলে ঠান্ডা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শিশুর শরীরে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন। এভাবে দিনে ৩/৪ বার করে ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে নিন যতক্ষণ পর্যন্ত শরীরের লাল লাল ভাব দূর না হয়। শিশুর ত্বক থেকে লাল লাল ভাব দূর হয়ে গেলে তারপর শিশুর ত্বকে নিয়মমাফিক প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরী লোশন মাখান। তারপরেও শিশু অস্বস্তি বোধ করলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
শিশুকে রোদ থেকে দূরে রাখতে সব সময় বাইরে নিয়ে গেলে ফুল হাতা সুতি জামা-কাপড় পরান এবং ছাতা ব্যবহার করুন।
ঘামাচি:
ঘামাচি শিশুর ত্বকে গরমে সবচেয়ে কমন একটি সমস্যা। গরমে এমন শিশু খুব কমই আছে যাদের ত্বকে ঘামাচি ওঠেনা। ঘামাচি সাধারণত শিশুর মুখে, ঘাড়ে, বগলে, পিঠে দেখা দিতে পারে। শিশুর শরীরে ঘাম রোমকূপে আটকে থেকেই ঘামাচি শুরু হয়। ঘামাচির ফলে শিশুর শরীরে চুলকানি দেখা দিতে পারে।
শিশুর শরীরে ঘামাচি দেখা দিলে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে। গোসলের সময় খুব হালকা সাবান বা বেবিওয়াশ ব্যবহার করবেন। গোসল শেষে শিশুর শরীর ভালোভাবে মুছে বেবি পাওডার লাগিয়ে নিন। এভাবে টানা কিছুদিন করার পর ঘামাচি চলে যাবে। যদি না যায় বা শিশুর শরীরে অস্বস্তির মাত্রা বৃদ্ধি পায় তাহলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
তবে শিশুর শরীরে ঘামাচি প্রতিরোধ করতে সব সময় ঠান্ডা জায়গায় রাখুন এবং ঘাম হলে বারবার মুছে দিন। এছাড়া সবসময় সুতি কাপড়ের জামা পরাতে চেষ্টা করুন।
ডায়াপার র্যাশ:
আপনার শিশুর পেছনের দিকের অংশ যখন লাল হয়ে ফুলে যাবে তখন ধরে নিতে পারেন শিশুর ডায়পার র্যাশ হয়েছে। এই ডায়পার র্যাশ মূলত তিন কারণে হতে পারেঃ ডায়পারের মতো বেবি প্রডাক্টে অনেক বেশি ময়েশ্চার, অনেক কম বাতাস এবং অস্বস্তি। শিশুর প্রথম ১৫ মাসে এই সমস্যা বেশি হয়, বিশেষ করে আট থেকে দশ মাসের মধ্যে। র্যাশ হলে নতুন ডায়পার পরানোর আগে ১০ মিনিট সময় নিন। অনেক সময় চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে আপনা আপনিই এটা চলে যেতে পারে। সেটা না হলে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন এবং সে অনুযায়ী র্যাশ ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
ইনফ্যান্ট একনে
অনেক নবজাতকের এই সমস্যা হতে পারে। এটা সাধারণত দুই থেকে তিন সপ্তাহ বয়সের মধ্যে শুরু হয় এবং চার থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত থাকতে পারে। হরমোনাল ইমব্যালান্স থেকে এই সমস্যা হতে পারে। ভালো ব্যাপার হচ্ছে এটা সাধারণত নিজ থেকেই চলে যায় এবং শিশুর জন্য খুব বেশি সমস্যার কারণ হয় না। একই সঙ্গে এটা ত্বকে কোনো স্থায়ী ক্ষতিও করে না। এই একনের জায়গায় সাবান ব্যবহার করবেন না। দিনে দুই থেকে তিন বার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং শুকাতে সময় দিন।
পোকার কামড়:
ছোটখাট পোকা বা পিঁপড়ের কামড়ে শিশুর ত্বকে ছোট ছোট লাল লাল দানা দেখা দিতে পারে। এসব কামড়ানো স্থানে মাঝে মাঝে অনেক বেশি চুলকানি হয়।
এরকম সময় আক্রান্ত স্থানে সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। তারপর ভেজা কাপড় দিয়ে আক্রান্ত স্থানে ভিজিয়ে রাখুন যাতে প্রদাহ কমে যায়। চুলকানি থেকে ঘা হয়ে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
শিশুকে সব সময় এমন স্থানে রাখুন যেন পোকা-মাকড় বা মশা আশে পাশে না থাকে। একদম নবজাতক হলে মশারির ভিতর রাখার চেষ্টা করুন।
দাদ:
দাদ এক ধরনের ছত্রাকজনিত আক্রমণ যা শিশুর শরীরের বিভিন্ন অংশে দেখা দেয়। শিশুর ত্বকে লাল গোল বৃত্তের মত চুলকানি এবং দাগ হয়। এটাকেই দাদ বলে। এন্টি ফাঙ্গাল যুক্ত যে কোনো ক্রিম এই রোগের জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা। তবে দাদ হলে শিধুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান এবং সে অনুযায়ী পরামর্শ নিন।
শিশুর ত্বকে গরম কালে সাধারণ কিছু সমস্যা সব সময়ই দেখা দেয়। অনেক সমস্যা আছে যেটা নিজে নিজেই সমাধান হয়ে যায়, তবে যে কোনো সমস্যা বেড়ে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তবে পাশাপাশি শিশুর ত্বকের যত্নে সব সময়ই সতর্ক থাকবেন যেন কোনো ত্বকের সমস্যাই খুব বেশি বেড়ে না যায়।