সন্তান জন্মের পর স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে কী কী করা উচিত
ক্ষত এবং ব্যথা:
যদি সন্তানের জন্ম অপারেশনের মাধ্যমে হয় তবে অপারেশনের ক্ষত এবং যোনি অঞ্চল খুবই সংবেদনশীল থাকে। অপারেশনের জায়াগায় সেলাইগুলো নিয়মিত পরিষ্কার এবং ড্রেসিং করতে হবে। যোনিমুখের সেলাই থেকে যে অস্বস্তি তৈরী হয় সেটা নিয়মিত গরম পানিতে লবন মিশিয়ে গোসল করলে অনেকটা দূর হবে। সাধারণত এক সপ্তাহ পর থেকেই সেলাই থেকে তৈরী ক্ষত সারতে শুরু করে। তবে সেরে ওঠার সময় এক এক জনের ক্ষেত্রে এক এক রকম। একদম সাধারণ ও সুস্থ্য জীবনে ফিরে আসতে কমপক্ষে তিনমাস সময় লাগবে।
রক্তপাত:
সন্তান জন্মের পর যোনিপথ থেকে মাসখানেকের মতো রক্তপাত হতে পারে। শুরুর দিকে রক্তপাতের পরিমাণ অনেক বেশি হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে রক্তপাতের পরিমাণ কমে যায়। আপনার ডাক্তার আপনি হাসপাতালে থাকার সময় এবং প্রসবোত্তর চেকআপের সময়ে আপনার রক্তপাতের পরিমাণ পরীক্ষা করবেন। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর যদি অস্বাভাবিক রক্তপাত দেখতে পান তাহলে আপনার ডাক্তারকে অবহিত করুন।
মাতৃত্বকালীন বিষণ্ণতা:
শিশুর জন্মের পর একজন মায়ের শুধুমাত্র শারীরিক পরিবর্তনই ঘটে না বরং মানসিকভাবেও তাকে নানান চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়। একজন নতুন মা হিসেবে নবজাতকের যত্ন নেওয়া খুব সহজ কোনো কাজ নয়। কাজেই এই নতুন জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সময় লাগবে। তবে সবকিছুর মাঝেও নিজের জন্য সময় বের করুন। বাচ্চা ঘুমিয়ে গেলে ১০ মিনিটের জন্য হলেও নিজের জন্য সময় হাতে রাখুন। যে সময়টা নিজের জন্য রাখছেন, সে সময়টাতে নিজেকে বুঝুন, সঙ্গীকে সময় দিন বা চাইলেও বিশ্রামও নিতে পারেন। সন্তান ঘুমিয়ে থাকার সময় আপনিও চাইলেও কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিতে পারেন, যতক্ষণ না আপনার সন্তানের ঘুম ভেঙে যায়। তারপরেও আপনি যদি হতাশাবোধ করেন, অবসাদগ্রস্ত হন বা বিভ্রান্তিতে ভোগেন, অবশ্যই এখান থেকে বের হয়ে আসতে অন্য কারো সাহায্য নিন।
বুকের দুধ অথবা কৌটার দুধ খাওয়ানো:
গর্ভবতী হওয়ার পর থেকেই আপনার স্তনে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। সন্তান প্রসবের পর স্তন থেকে ঘন হলুদ বর্ণের তরল নির্গত হয় যেটা কোলোস্ট্রাম নামে পরিচিত। দুই থেকে চার দিন পর থেকে স্তন থেকে দুধ উৎপাদন শুরু হয়। এই সময় বুকে অতিরিক্ত দুধ আসা স্বাভাবিক। নবজাতককে সঠিকভাবে স্তনপান করানো একটু কঠিন হয়ে যেতে পারে এ সময়। সন্তান প্রসবের পর স্তনবৃন্তকে ঘা হওয়াটা খুব সাধারণ একটি ঘটনা। নবজাতকের অতিরিক্ত চোষার ফলে স্তনের চারপাশে ফাটল ধরে।
আপনি চাইলে শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি কৌটার দুধও খাওয়াতে পারেন। এটা আপনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ীও করতে পারেন বা জীবনযাত্রার স্বাচ্ছন্দ্যের জন্যেও করতে পারেন। তবে আপনার শিশুকে বাজারের কোন দুধটি খাওয়াবেন এটার জন্য অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কৌটার দুধ খাওয়ানোর আগে দুধ বানানো এবং সংরক্ষণের জন্য সঠিক নির্দেশাবলী মেনে চলুন।
মায়েদের পুষ্টি:
সন্তান প্রসবের পর একজন মা তার স্বাস্থ্য ধীরে ধীরে ফিরে পায়। এ সময় বেশি বেশি পুষ্টিযুক্ত খাবার খেতে হবে। আপনার সন্তান যদি আপনার বুকের দুধ খায় তবে বুকের দুধের পরিমাণ বজায় রাখতে আপনাকে অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। পর্যাপ্ত দুধ সরবরাহের জন্য আপনাকে প্রচুর পরিমাণে ফলমূল, শাক-সবজি, আমিষ জাতীয় খাবার, দুধ ও শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। কারণ, একজন সুস্থ মা-ই শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারেন।
তথ্যসূত্রঃ
- https://www.whattoexpect.com/pregnancy/pregnancy-health/postpartum-recovery/
- https://familydoctor.org/recovering-from-delivery/
- https://www.nhs.uk/conditions/pregnancy-and-baby/you-after-birth/