প্রসবকালীন প্রস্তুতি হিসেবে হাসপাতালে যাওয়ার আগে ব্যাগে যেসব জিনিস গুছিয়ে নেবেন
শিশু জন্মের ঠিক আগ মুহুর্তে সব মায়েদেরই কমবেশি প্রস্তুতি নিতে হয়। সন্তান প্রসবের পর যেহেতু প্রসুতির শরীরে বেশ একটা ধকল যায় তাই আগে থেকে সবকিছু গুছিয়ে হাতের কাছে রাখলে অসুস্থ অবস্থায় অনেকটা উপকার হয়।
গর্ভকালীন পুরো সময়টাই হয়তো আপনি কাটিয়েছেন আপনার নবজাতক পৃথিবীতে আসার পর তার জামা-কাপড়, ত্বকের যত্ন, খাবার, খেলনা, বাড়তি আরামের কথা ভেবে। সেসব ব্যবস্থা করে ফেলার সাথে সাথে ডেলিভারির সময়ের কথা চিন্তা করে নিজের জন্যও পরিকল্পনা করে রাখতে হবে।
প্রসবকালীন সময়ের আগে, প্রসবকালীন সময় এবং পরবর্তী সময়ে কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে প্রথমেই তার একটি তালিকা থাকা প্রয়োজন। অনেক কিছুর মাঝে অনেক দরকারি জিনিস বাদ পড়ে যায় আবার অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিস ব্যাগে চলে আসে। তাই প্রথমেই ঠাণ্ডা মাথায় একটি তালিকা তৈরী করে নিতে হবে।
সাধারণত ৩৫ সপ্তাহের পর যে কোনো সময় প্রসব ব্যথা শুরু হতে পারে। অনেক সময় এমনিওটিক মেমব্রেন রাপচার বা পানি ভেঙে যাওয়ার কারণে জরুরিভিত্তিতে সি সেকশনের মাধ্যমে বাচ্চা ডেলিভারি করার প্রয়োজন হতে পারে।
নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে এক-দুই দিনের বেশি হাসপাতালে না থাকলেও সি-সেকশনের মাধ্যমে বাচ্চা জন্মগ্রহণ করলে কমপক্ষে তিন-চারদিন হাসপাতালে থাকতে হয়। তাই সেই সময় বিবেচনা করেই হাসপাতালে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে নিতে হবে।
প্রেসক্রিপশন:
প্রথমেই নিজের প্রেসক্রিপশন, পুরো সময়ের ফুড চার্ট, আল্ট্রাসনোগ্রাফ ও অন্যান্য টেস্টের রিপোর্ট, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও নিজের জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি সাথে নিতে হবে।
প্রসাধন:
টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, চিরুনি, ছোট আয়না, চুল বাঁধার রাবার ব্যান্ড এগুলো খুব প্রয়োজনীয় এসময়। শিশুকে প্রথম প্রথম স্তন পান করানোর সময় শিশুর মুখের উপর চুল পড়তে পারে। তাই চুলগুলো বেঁধে রাখুন। সাথে ছোটো ডিওডের্যান্ট, ময়েশ্চারাইজার এবং লিপবাম রাখতে পারেন।
জামা-কাপড়:
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর কারণে এসময় নরমাল অন্তর্বাস ব্যবহার না করে নার্সিং ব্রা ব্যবহার করুন। এর পাশাপাশি হাল্কা রঙের সুতি ঢিলেঢালা কয়েকটি জামা-কাপড় নিয়ে নিন। অনেকেই এ সময় ঢিলা ম্যাক্সি পরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। পাশপাশি শিশুর জন্য নরম সুতি কাপড়ের পরিষ্কার জামা নিয়ে নিন।
স্লিপার:
হাঁটাচলার জন্য অবশ্যই নরমাল স্লিপার নিয়ে নেবেন। সন্তান প্রসবের পর দ্রুত সুস্থতার জন্য কিছুটা হাঁটাচলা প্রয়োজন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য এ সময় হাসপাতালে স্লিপার ব্যবহার করা উচিত।
বিছানার চাদর, বালিশ, তোয়ালে:
পরিষ্কার বিছানার চাদর, নরম পাতলা কাঁথা ও আপনার স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য বালিশ নিয়ে নিন। অনেকেই নিজের বালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারেন না। আর প্রসবের পর প্রসূতির সুস্থতার জন্য ঘুম খুব জরুরি। হাত-মুখ মোছার জন্য তোয়ালে ব্যাগে রাখুন।
মোবাইল ও চার্জার:
নবজাতকের জন্মের পর অনেক আত্মীয়-স্বজনই ফোন করে খোঁজ খবর নেন। প্রসূতি একটু সুস্থ হয়ে মোবাইল ব্যবহার করতে পারেন। তাই এ সময় হাতের কাছে মোবাইল রাখা যায়। তবে মোবাইল চার্জ করার জন্য লম্বা কডযুক্ত চার্জার সাথে নিন।
পানির বোতল:
ছোটো একটি পানির বোতল অনেকেই সাথে রাখে। প্রসবকালীন সময়ে ঘন ঘন পানি পিপাসা পায়, বুক শুকিয়ে যায়। তাই পানির বোতল ব্যাগে রাখুন।
স্যানিটারি ন্যাপকিন:
এসময় সবচেয়ে দরকারি একটি জিনিস হলো স্যানিটারি ন্যাপকিন। আপনি যে ন্যাপকিনটি ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সেটি ব্যাগে রাখুন। তবে এ সময় তুলোর ন্যাপকিন ব্যবহার করাই ভালো। সাথে চাইলে এডাল্ট ডায়পারও রাখতে পারেন।
হাসপাতালে শিশুর জন্য পর্যাপ্ত জামা-কাপড়, কাঁথা-কম্বল, বালিশ সাথে নিন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো কিছু যেমন নেয়ার দরকার নেই তেমনি প্রয়োজনীয় কোনো কিছু বাদ পড়ে গেলেও সমস্যায় পড়তে হয়। আগে থেকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন থাকলে মানসিকভাবে আপনি অনেকটা শান্তিতে থাকবেন। আপনার অনাগত শিশুর জন্য একরাশ শুভেচ্ছা।