সন্তান জন্মদানের পর ত্বকের পরিচর্যা
একজন নারীকে সন্তান জন্মদানের পর অনেক ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বিশেষ করে ত্বকের ক্ষেত্রে প্রসবকালীন সময়ের আগে ও পরে অনেক ধরণের পরিবর্তন আসে। কিছু নারীর ক্ষেত্রে ত্বকের এই পরিবর্তন হয় ইতিবাচক, আবার কিছু ক্ষেত্রে হয় একদম বিপরীত। তবে মনে রাখা উচিত এসব কোনো পরিবর্তনই চিরস্থায়ী নয়। একটু যত্ন নিলেই গর্ভকালীন সময়ের আগের ত্বক ফিরে পাওয়া সম্ভব।
সন্তান জন্মদানের পর নবজাতকের প্রতিই সব নজর থাকে; নতুন মায়েদের নিজেদের প্রতি মনোযোগ থাকে না খুব একটা। কিন্তু দিনে কয়েক মিনিট সময় দিলেই আগের সেই আত্মবিশ্বাস ও ঝলক ফিরে পাওয়া সম্ভব।
গর্ভকালীন সময়ে সবচেয়ে পরিচিত ত্বকের সমস্যা হল ওজন কমা বা বাড়ার ফলে কিছু জায়গায় দাগ পড়া। এসব দাগগুলো পুরোপুরি যায় না, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এসব ফিকে হয়ে আসে। প্রতিদিন দুই বার জৈব-তেল ব্যবহার করলে এই দাগগুলো প্রায় দূর করা সম্ভব।
আবার গর্ভকালীন সময়ে কখনো মুখের ওপর কালো দাগ পড়তে পারে। গর্ভকালীন হরমোনের আধিক্য হলে এরকম হয়ে থাকে। প্রসবকালীন সময়ের পর হরমোনের মাত্রা ঠিক হতে শুরু করলে কিছু দাগ অবশ্য চলে যায়। এরকম হলে সূর্যের সাথে টানা সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত।
কালো দাগ ও চোখ ফোলা ফোলা হয়ে যাওয়ার কারণও হরমোনের পরিবর্তন। সন্তান জন্মদানের পর ঘুম কম হওয়াও একটা কারণ হতে পারে। শরীরের ওপর যে ধকল যায় সেটা চোখের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। শিশুকে ঘন ঘন খাওয়ানোর জন্য ঘুম না হওয়াও এর একটা কারণ।
চামড়ায় লাল দাগ পড়াও প্রসব পরবর্তী সময়ে খুব সাধারণ একটা সমস্যা। সন্তান জন্মদানের পর প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বেড়ে গেলে ত্বকে গোটা হতে পারে। অনেক নারীর ত্বক প্রসবকালীন সময়ের পর বেশ স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে।
একসঙ্গে ত্বকের এত বেশি পরিবর্তন মেনে নেওয়া অনেক সময় কঠিন। কিন্তু প্রসবকালীন সময়ের পর বেশি চাপ আর হরমোনের ওঠানামা হয় সেজন্য ত্বকেরও একটা পরিবর্তন হয়। সুষম খাদ্য আর সাধারণ ত্বকের যত্ন নিলেই এসব ঠিক করা সম্ভব।
এখানে প্রসব পরবর্তী সময়ে ত্বকের যত্ন নেওয়ার কিছু টিপস দেওয়া হল :
১) দরকার না হলে সূর্য থেকে দূরে থাকা উচিত, আর হলে ভালো সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করা উচিত।
২) প্রচুর পানি পান করলে ত্বক শুকিয়ে যাবে না, উজ্জ্বল ভাবটা ফিরে আসবে।
৩) ৮ ঘন্টা ঘুমালে ত্বকের পরিবর্তনের সাথে ধাতস্থ হওয়া সহজ। যদিও একজন নতুন মায়ের জন্য কাজটা বেশ কঠিন। পরিবারের অন্য সদস্যরা দিনের বেলায় শিশুর যত্ন নিলে দুই বা তিনবার একটু ঘুমিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে।
৪) পুষ্টিকর খাবার খেলে ত্বকের সমস্যা কাটানো সম্ভব।
৫) মরা চামড়া সপ্তাহে তিন বার তুলে ফেলতে পারলে ত্বকের উন্নতি হয়, দাগও কমে আসে।
৬) দাগ কমানোর জন্য ভিটামিন-ই ও কোকোয়া বাটারযুক্ত তেল ব্যবহার করা উচিত। তবে মনে রাখা উচিত দাগ পুরোপুরি দূর না হলেও হালকা হয়ে আসবে।
৭) ত্বক ও শরীরের উন্নতির জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মাল্টি ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে।
৮) ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিনের রুটিনে কিছু ব্যায়ামের অভ্যাস রাখা যেতে পারে।
এসব পদক্ষেপ নিলে প্রসব পরবর্তী সমস্যা কমানো সম্ভব। তবে সমস্যা বেড়ে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এটাও মনে রাখা উচিত, মায়ের ভূমিকা উপভোগ করা উচিত ও নিজেকে ভালোবাসা উচিত।