পারিবারিক বন্ধন
বাবা মায়ের কাছে জন্মের পর প্রথম নিজের সন্তানের মুখ দেখার চেয়ে আনন্দের আর কিছুই নেই। আপনার ছোট্ট শিশুর মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে হয়তো আপনার মনে আসতে পারে, ‘এই কি আমার সন্তান যে সারা দিনরাত আমার পেটে তার ছোট্ট ছোট্ট পায়ে লাথি মারতো?’
আপনি এবং আপনার সঙ্গী একই সাথে হয়তো বিস্ময়কর দৃষ্টিতে আপনার ছোট্ট সোনামণির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবেন। প্রথম দর্শনে যেমন প্রেম হয়, ঠিক সেরকমভাবেই এ সময়েই শিশুর সাথে একটা বন্ধন তৈরী হয়ে যায় বাবা মায়ের।
জন্মের পর শিশুর সাথে ত্বকে ত্বক মিলিয়ে যে বন্ধন তৈরী হয়:
সন্তান জন্মের সময় যে ডাক্তার আপনার সাথে ছিলো তার কাছ থেকে জেনে নিন যে শিশুর জন্মের পর পরই তার শরীরে শরীর মেশানো যাবে কি না। বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের ত্বকের সাথে ত্বক মিশিয়ে যে সম্পর্ক তৈরী হয় তার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে:
- প্রয়োজনীয় হরমোন বাড়িয়ে মায়ের দুধের সরবরাহ বৃদ্ধি করে।
- এটি বাবার সাথে সন্তানের একটি সম্পর্ক গড়ে তোলে। সেই সাথে শিশুও তার বাবার কোলে নিজেকে নিরাপদ অনুভব করে।
বুকের দুধ বা কৌটার দুধ খাওয়ানো:
একজন মা নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুর চোখে চোখ রাখতে পারেন, গল্প বলতে পারেন বা শুধু হাসিমুখে তাকিয়েও থাকতে পারেন। বাবাও এই সময় মা কে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করতে পারেন যেমন বাড়তি বালিশ এনে দেয়া, হালকা নাস্তা বা পানি এনে দেয়া।
অবশ্য কৌটার দুধ বোতলে বানিয়ে খাওয়ালে বাবা এবং মা দুজনেই পালাক্রমে বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন এবং এই বিশেষ মুহুর্ত উপভোগ করতে পারেন।
খেলা-ধূলা:
শিশুর বয়স ২ মাস পার হবার পর সে তার হাসি এবং মুখ থেকে বিভিন্ন ধরনের শব্দ বের করে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করবে। আপনি এবং আপনার সঙ্গী শিশুর সাথে এই সময় বিভিন্ন ধরনের খেলা-ধুলা করতে পারেন, কথা বলতে পারেন এবং সময়টা উপভোগ করতে পারেন। আপনার সন্তানকে যখন বিভিন্ন ধরনের শব্দ করা এবং নড়াচড়া করা খেলনা দেবেন তখন দেখবেন সে কিভাবে এই খেলনাগুলোর সাথে খেলে এবং চোখ দিয়ে তাদের অনুসরণ করে। বিভিন্ন রকম অঙ্গভঙ্গি এবং শব্দ করে তাকে হাসান। আপনার দিক তাকিয়ে আপনার শিশু যখন হাসবে তখন সেইটা আপনি দারুণভাবে উপভোগ করবেন।
গোসল করার সময়:
আপনার শিশুর বয়স যখন ৬ মাস, তখন তাকে গোসল করানোর সময়টা আপনাদের দুজনে্র জন্যই উপভোগ্য। গোসলের সময় শিশু পানি ছিটিয়ে দারুণভাবে আনন্দ করে। এ সময় সে বিভিন্ন খেলনা এবং বুদবুদ নিয়ে খেলা করে। শিশুর সাথে বন্ধন তৈরীর জন্য এটা একটা দারুণ সময়। কাজেই সম্ভব হলে মাঝে মাঝেই শিশুকে নিয়ে গোসলের সময় খেলা করুন।
পারিবারিক খাবার সময়:
শিশুর বয়স ৬ মাস পেরিয়ে গেলে তাকে শক্ত খাবার খেতে দিন। আপনি এবং আপনার সঙ্গী যখন একসাথে খেতে বসবেন তখন শিশুকেও খাবার দিন। এতে করে তার পরিবারের সাথে বসে খাবার অভ্যাস তৈরী হবে। আপনি চাইলে আপনার শিশুকে একটি উঁচু চেয়ারে বসাতে পারেন এবং তার জন্য যে আলাদা খাবার তৈরী করেছেন সেটা খাওয়াতে পারেন। অথবা আপনাদের খাবারই ঝাল ছাড়া একটু নরম করে তাকে দিতে পারেন। পরিবারের সবাই একসাথে বসে খেলে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হয়। এটা শুধু আপনার সাথে আপনার শিশুর বন্ধন নয়, বরং আপনার সাথে আপনার সঙ্গীর বন্ধন ও দৃঢ় করে।
পরিবার হিসেবে আপনার শিশু আপনার কাছ থেকে ভালোবাসা স্পর্শ ও যত্ন চায়। শিশুর জন্মের পর থেকে প্রতিটি মুহুর্তই আপনার সাথে তার বন্ধন তৈরীর সুযোগ। মনে রাখবেন, পারিবারিক বন্ধন তৈরী করতে সময় ও চেষ্টা, দুটোরই প্রয়োজন হয়। কিন্তু এটাই একটা শক্তিশালী পরিবারের ভিত।
তথ্যসূত্রঃ
- https://www.babycentre.co.uk/a25015043/bonding-as-a-family
- https://www.babycenter.com/0_parent-child-bonding-ideas-at-every-age_10414672.bc
- https://www.babycenter.com/609_5-ways-to-bond-with-your-baby-besides-breastfeeding_20004450.bc
- https://www.webmd.com/parenting/baby/forming-a-bond-with-your-baby-why-it-isnt-always-immediate#1
- https://kidshealth.org/en/parents/bonding.html
- https://www.parents.com/baby/feeding/30-little-ways-to-bond-with-baby/