কীভাবে আপনার শিশুসন্তানকে বাসায় ব্যস্ত রাখা যায়
বাবা-মায়েদের সবচেয়ে বড় চিন্তাগুলোর একটি কীভাবে আপনার শিশুসন্তানকে বাসায় ব্যস্ত রাখা যায়। বিশেষ করে এরকম অবরুদ্ধ সময়ে যখন বাইরে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই, আপনি যখন বাচ্চাকে বাইরে খেলাধূলা করার জন্য নিয়ে যেতে পারছেন না, তখন বাচ্চাকে ব্যস্ত রাখাটা একটা চ্যালেঞ্জই বটে। বাচ্চা যখন হাঁটতে পারে না, তখন তাকে ব্যস্ত রাখার জন্য খুব বেশি ভাবতে হয় না আপনাকে। কিন্তু যখন বাচ্চা বড় হতে থাকে, তখন তাকে বিনোদন দেওয়ার জন্য আপনাকে নিত্যনতুন উপায় বের করতে হয়। যখন পরিবারের সবাই বাসায় থাকে, বাচ্চাকে তখন কিছু নতুন কাজ ও নতুন দক্ষতার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটা সুযোগ হিসেবেও দেখতে পারেন এটাকে। এখানে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো যা আপনার কাজে আসতে পারে।
১) ঘরেই কিছু খেলা বের করা
শিশুর সঙ্গে শুধু লুকোচুরি খেলেই অনেকটা সময় পার করা যায়। আপনার বাচ্চা যখন এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে ঘোরাঘুরি করে, তখন আপনি একদম চুপিসারে ওর পিছনে পিছনে আসতে পারেন।আপনাকে না দেখলে সে চিন্তায় পড়ে যাবে। তবে যখনই আপনি তার সামনে আসবেন, আপনার শিশু হাসি দিয়ে আপনার মন ভরিয়ে দেবে। শিশুর সঙ্গে খেলাধূলা করার জন্য সব মায়েরই নিজস্ব কিছু কৌশল থাকে। এসবের মাধ্যমে মা ও শিশুর বন্ধনও অনেক দৃঢ় হয়। আর আপনার শিশু যখন আরেকটু বড় হবে, তখন তাকে সাধারণ স্মৃতি পরীক্ষা বা শব্দ শুনে জিনিস চেনানোর মতো সহজ কিছু খেলা শেখাতে পারেন। এগুলো আপনার শিশুকে ব্যস্ত রাখতে সাহায্য করবে।
২) গল্পের বই পড়া
বই পড়তে অবশ্যই আপনার সন্তানের কিছুটা সময় লাগবে। আপনার হাঁটতে শেখা শিশুসন্তান বই কী জিনিস না বুঝেই সেটা ছিড়ে ফেলতে পারে। চিন্তা করবেন না, তাকে আরও ছবিসহ বই দিন। আপনার সন্তান হয়তো অক্ষর চিনবে না, তবে ছবি দেখলে সে সেটা চিনতে শিখবে দ্রুত। আর খেলতে খেলত যখন শিশু ক্লান্ত হয়ে পড়বে, তখন তাকে বই থেকে গল্প পড়ে শোনান। ডিজিট্যাল যুগে যখন ‘ইউটিউব প্রজন্ম’ নামে আলাদা একটা নামই হয়ে গেছে। আপনি সারাদিন বাসায় থাকলে কিছুটা সময় বাচ্চাকে বই থেকে গল্প পড়ে শোনানোর জন্য বের করে নিতে পারেন। কিছু নতুন ছড়া শেখাতে পারেন। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে আপনি শিশুর কল্পনার জগতটা অনেক বড় করতে সাহায্য করতে পারেন।
৩) বাইরের খেলা ঘরেই খেলুন
সন্তানকে খেলার জন্য বাইরে নিয়ে যেতে পারছেন না, খুব ছটফট করছে সে? বাইরে বের না হতে পারলে ঘরেই খেলা শুরু করে দিন। আপনার ব্যালকনিটা ক্রিকেটের পিচ বানিয়ে ফেলুন। আপনার সন্তান হয়ে যাক ব্যাটসম্যান, আপনি হয়ে যান বোলার। নইলে ফুটবল দিয়েও ওর সাথে খেলতে পারেন। আর বাচ্চাদের জন্য খেলার চেয়ে ভালো বিনোদন কমই আছে। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, যে ব্যাট-বল তুলে দিচ্ছেন সেটা যেন শিশুদের জন্য বিশেষভাবে বানানো হয়। শিশুর সুরক্ষা যেমন তাতে নিশ্চিত হবে, তেমনি আপনার বাসার জিনিসপত্র অক্ষত থাকার সম্ভাবনাও বাড়বে।
৪) লেগোস আর ব্লকসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন
আপনি যখন বাসায় রান্না বা অন্য কোনো কাজ করেন, তখন আপনার সন্তানকে ব্যস্ত রাখবেন কীভাবে? তাকে লেগো আর ব্লক ধরিয়ে দিন, দেখবেন অনেকটা সময় সে নিজে নিজে পার করছে। লেগো আর ব্লকের মাধ্যমে আপনার সন্তানের সাংগঠনিক দক্ষতার সাথে বিশ্লেষণী ক্ষমতাও বাড়বে। আপনার বাচ্চা যখন হাঁটতে শিখবে, তখন লেগোর ব্যবহার নাও বুঝতে পারে। তবে বড় হতে হতে তাকে আস্তে আস্তে এগুলোর ব্যবহার বুঝিয়ে দিন।তবে খেয়াল রাখতে হবে, খেলতে খেলতে বাচ্চা যেন কোনো কিছু মুখে দিয়ে না ফেলে। এজন্য বাচ্চার ওপর নজর রাখতে হবে সব সময় আর নিশ্চিত করতে হবে প্যাকেটের আগে বয়স দেখে সেরকম উপযোগী খেলনা যাতে কেনা হয়।
৫) সন্তানের সাথে গান ও নাচ উপভোগ করুন
একদম ছোট থেকে বেশির ভাগ শিশুই গানের তালে তালে মাথা দোলাতে থাকে। যখন সে হাঁটতে শেখে, তখন এমনকি টিভি দেখে কিছু নাচের অনুকরণ করার চেষ্টা করে। আপনিও এসব ক্ষেত্রে আপনার শিশুর সঙ্গী হতে পারেন। সহজ কিছু খেলনা বাদ্যযন্ত্র শিশুকে কিনে দিতে পারেন। আপনার হাতে সময় থাকলে শিশুকে নাচের কিছু সহজ মুদ্রাও শেখাতে পারেন। এটা আপনার সন্তান অনেক বেশি উপভোগ করবে।
৬) রং ও তুলির সাথে পরিচয় করিয়ে দিন
শিশুসন্তানকে বিভিন্ন রংয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া তার বেড়ে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটা ধাপ। স্কুলে আঁকাআঁকি শেখার আগে বাচ্চাকে রং চিনতে শেখান। এখন একদম হাঁটতে শেখা বাচ্চাদের জন্যও ভালো ভালো আঁকাআঁকির জিনিস পাওয়া যায়। সেগুলো দিয়ে দেখতে পারেন। আপনার ঘরদোর একটু এলোমেলো হয়ে যেতে পারে, তবে বাচ্চাকে ব্যস্ত রাখার এটা আরেকটা ভালো উপায়। খেয়াল রাখতে হবে, যে রঙ দিচ্ছেন সেটা যেন শিশুবান্ধব হয় ও বিষাক্ত না হয়।